গল্প ও কবিতা

গল্পটি দীপার। ইউনিভার্সিটির জীবন আর ভালোবাসার লুকোচুরির গল্প

দীপা আর রাব্বি বেশ ভালো বন্ধু। ইউনিভার্সিটির প্রথম দিকে যদিও দীপার ভালো বন্ধু ছিল মোর্শেদ। কিন্তু মোর্শেদ দেখতে বেশ হ্যান্ডাসাম, লম্বা এবং সবচেয়ে গুরুত্তপুর্ন সে সিঙ্গেল ছিল। স্বাভাবিকভাবেই বন্ধুমহলে গুনগুন শুরু হয়ে গেল। কিন্তু দীপা বরাবরই এই সম্পর্ক টাকে বন্ধুত্বের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিল। তাই সে ঠিক করল বন্ধুত্বের মাঝে একটি দেয়াল তৈরি করতে হবে। ধীরে ধীরে দীপা সরে যেতে লাগল। আর অমনি দীপার এক ভাবিস্ট বান্ধবী সেই জায়গাটা দখল করে নিল। ফলাফলটা হয়ে গেল একদমই উল্টো। মোর্শেদ তখন শুধু দীপার থেকে নয় বরং তার সকল ক্লাসমেটের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকল।

ইউনিভার্সিটি জীবন হল চরম স্বাধীনতার একটি সময় যেখানে বাধাহীন উল্লাসে মেতে থাকা যায়। এই উল্লাস এক অজানা আনন্দের যেখানে চিন্তামুক্ত সময়ের সাথে মাতামাতি করা যায়। এই জীবনটাকে দীপা বেশ উপভোগ করছিল কারন তার স্কুল আর কলেজ লাইফ কেটেছে শুধু জাওয়া আসার মধ্যেই।

দীপার আরও একজন ভালো বন্ধু হল মোহনা। দুজনে পরিক্ষার হলে বেশ দেখা দেখি করে পরীক্ষা দিত। বলতেই হবে যে মোহনা ছিল অত্যাধিক মেধাবী। তার সৃজনশীলতাও কোন ভাবে কম ছিল না। পরিক্ষার হলে কোন প্রশ্ন কমন না পরলেও সে তার লেখা চালিয়ে যেত অদ্ভুতভাবে। দীপার মনের কথা গুলো অবলীলায় বলে ফেলতে পারত মোহনাকে। আর মোহনার বুদ্ধিমত্তা ছিল প্রশংসনীয়। দীপার বিশ্বাস যে মোহনার কাছে সম্ভবত সব সমাধানই আছে।

দীপার চুলের প্রশংসা ছিল ইউনিভার্সিটি জুড়ে। আর উচ্চটাতেও সে অন্যান্যদের তুলনায় এগিয়ে ছিল। ক্লাসের সবচেয়ে লম্বা মেয়ে সে। ঝামেলা এড়িয়ে চলতে সে বেশ পছন্দই করে। মোর্শেদের সাথে বন্ধুত্বের সময় দীপা ক্লাস করত বাসা থেকে এসেই। তাদের বন্ধুত্ব কখনই শেষ হয় নাই কিন্তু গারত্ত্বটা যখন কমে আসে তখনই দীপার পরিবার অন্যত্র শিফট হয়। ফলে দীপাকে চলে আসতে হয় ছাত্রি হলের আনন্দভুবনে। সম্ভবত ছাত্রি হলে পাওয়া সময়টাই ছিল দীপার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।

রাব্বির সাথে দীপার বন্ধুত্ব গরে উঠবার কারন হল রাব্বি সিঙ্গেল ছিল না। অন্ততপক্ষে দীপা কে জড়িয়ে কেউ কিছু বলবেনা সেই সান্তনা ছিল দীপার। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো, বন্ধুদের মুখ তো শিকল পরিয়েও বন্ধ রাখা যায়না। রাব্বির সাথে দীপার বন্ধুত্তের এক অজানা সংজ্ঞা ছিল। বিকেলে চায়ের দোকানে আড্ডার সময় দীপা বসলে রাব্বি রোদ ঢেকে বসত। একসাথে রিকসায় তারা কত ঘুরেছে। দীপার চুল উড়ে উড়ে রাব্বির মুখের কাছে চলে যেত আর রাব্বি চোখ বন্ধ করে তার পরশ নিত। একদিন প্রচণ্ড রোদে তারা রিক্সায় চরছিল সহপাঠীর জন্মদিন পালনে কেক আনবার জন্য। রোদ যেন দীপা ছুঁতে না পারে তাই রাব্বি তার মুখ খানি এগিয়ে রেখেছিল সারা পথ জুড়ে।  কখন কখন সারা রাত পার হয়ে যেত তাদের কথায়। গাদা খানিক মান অভিমান আর অনাবিল আনন্দ নিয়ে চলছিল তাদের এই বন্ধুত্ব।

সেমিস্টার রেসাল্ট হয়েছে। ব্যাচের বন্ধুরা সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে। দীপা আর রাব্বি পাশাপাশি বসেছে।

দীপাঃ তোর কি পড়াশুনা করতে ইচ্ছে করে না? খালি ঘুমালে কি চলবে নাকি।

রাব্বিঃ এত পড়াশুনা করে কি হবে?

দিপাঃ কি হবে মানে! আচ্ছা তুই যদি নেক্সট সেমিস্টারে ৩.৫ এর উপর জি পি এ আনতে পাড়িস তবে তোর সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা আমি তোকে দিব।

রাব্বিঃ কি সেটা?

দীপার ধারনা রাব্বি সেটা বুঝতে পেড়েছিল সেদিন। কিন্তু শুধুই না বোঝার ভাব ধরেছিল।  দীপা যদিও উপলব্ধি করতে পারত যে সে এক অজানা পথে চলছে। তার নীতি কখনই তাকে সম্পর্ক ভাঙনে সায় দেয় না। তবে দীপা বুঝতে পারত যে রাব্বি বাধাহীন ভাবে তার কাছে চলে আসবে। তাই দীপা তার মনকে বেধে রাখা শুরু করে দিল।

ফেসবুক সেই সময় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। নতুন নতুন বন্ধুকে ফ্রেইন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানো আর হাই বলে গল্প শুরু করে দেয়া। দিপাও বেশ সময় দিতে লাগল ফেসবুকে। সে উৎসাহ দিতে থাকল রাব্বিকে তার জুটির সাথে বেশি বেশি সময় দেবার জন্য। যদিও তাদের এই অদ্ভুত সম্পর্কের কোন নাম ছিল না কিন্ত সেখানে সত্যি সত্যি অনেক ভালোবাসা ছিল। সেটা ছিল নামহীন ভালোবাসা।

হঠাথ একদিন দীপার ফেসবুকে পরিচয় হয় রসির সাথে। রসি বেশ মেধাবী এবং ক্রিকেট খেলত। যা দীপাকে আকর্ষন করে তার প্রতি। তারপর যা হয় আর কি। তারা দুজন দেখা করে। শুরু হয় তাদের মাঝেও এক অদ্ভুত ভালোবাসা। এই ভালোবাসাটাও অদ্ভুত কারন এখানেও দুজনই পালিয়ে বেড়াচ্ছিল অন্য দুজনের থেকে। অবশ্য রসি যে তার প্রাক্তন প্রেমিককে ভূলে থাকার জন্য নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছিল তা দীপা জানতে পারে অনেক পারে। রসির সাথে দীপার সম্পর্ক গড়ে উঠে ইউনিভার্সিটির একদম শেষ সেমিস্টারের সময়। তারপর অবশ্য তারা একসাথে পোস্ট গ্রাজুয়েশান শুরু করে। তাদের সম্পর্ক অনেক ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে কিভাবে কিভাবে যেন চূড়ান্ত পরিনিতির দিকে ধাবিত হয়, মানে বিয়ে আর কি।

ওদিকে রাব্বির সম্পর্ক্টাও আর টিকে থাকে না। কারণটা খুবই সাধারন বাঙ্গালী কারন। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় হয়েছে। ইউনিভার্সিটি পরুয়া বেকার ছেলের কাছে কেউতো আর মেয়ে দিবে না। ভাল সম্মন্ধ আসায় তিশা আর বিয়েটা ভাঙতে পারে না। রাব্বি হয়ে পরে একাকী। কিন্তু ততক্ষণে দিপাও অজানা পথে হাত ধরে ফেলেছিল রসির সাথে। রসি আর দীপার বিয়েতে সকলেই এসেছিল।

অনেকদিন বাদে একদিন রাব্বি দীপার কাছে জানতে চেয়েছিল, তুই আমাকে সেদিন কি দিতে চেয়েছিলি। উত্তরটা যদিও রাব্বিই দিয়ে দিয়েছিল। দীপা ফোনের ওপাশে চুপ করে ছিল। লাল গোলাপ ছিল ভালবাসার প্রতীক যা তাদের দুজনের মধ্যে কখনই বিনিময় হয়নি। হয়ত সেটি শুধুই একটি লাল গোলাপ ছিল।

দীপা আর রসি এখন সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার যুদ্ধে মেতে আছে। রাব্বিরও নতুন একটা রিলেশান হয়েছে কিছুদিন হল। তাদের বিয়ের কথাও চলছে। এখন তো আর রাব্বি বেকার নয়, বিসিএস ক্যাডার বলে কথা। বিয়ের যোগ্য পাত্র সে।

ট্যাগঃ বাংলা গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, জীবনের গল্প, গল্প রোমান্টিক, হাসির গল্প, রূপকথার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালো গল্প, শারীরিক প্রেমের গল্প, রোমান্স প্রেমের গল্প, হঠাৎ প্রেমের গল্প, নতুন প্রেমের গল্প, সেরা প্রেমের গল্প, প্রেমের গল্পের বই, প্রথম প্রেমের গল্প, মিষ্টি মেয়ের প্রেমের গল্প, সত্যি প্রেমের গল্প, সুন্দর প্রেমের গল্প, আমার প্রেমের গল্প, রোমান্স প্রেমের গল্প, প্রথম প্রেমের গল্প, বর্তমান প্রেমের গল্প, প্রেমের কবিতা, প্রেমের গল্প পড়তে চাই

Related Articles

Back to top button
error: