চাকরি প্রস্তুতি

বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় পাশ নির্ধারিত হয় কিভাবে?

লিখিত পরীক্ষা হল বিসিএস এর প্রধান পরীক্ষা। সাধারণত প্রতি বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শুরু হয় লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পালা। বিসিএস পরীক্ষায় তিন ক্যাটাগরিতে আবেদন করা যায়। জেনারেল ক্যাডার (সাধারণ ক্যাডার) , টেকনিক্যাল ক্যাডার (কারিগরি ক্যাডার), বোথ ক্যাডার (উভয় ক্যাডার)।

আবেদনসাধারণত পরীক্ষার প্রায় এক মাস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় ২ থেকে ৩ মাস পর ফলাফল প্রকাশিত হয়। সর্বমোট ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয় এবং সাধারণ ও কারিগরি/পেশাগত উভয় ক্যাডারের জন্য বাড়তি ২০০ নম্বরের অর্থাৎ ১১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় শতকরা ৫০ ভাগ নম্বর পেলে সাধারণত একজন প্রার্থী ভাইভার জন্য নির্বাচিত হয়।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষাযর মান বণ্টন

৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা (গড় পাস নম্বর ৫০%)

প্রিলিমিনারি টেস্ট-এ কমিশন কর্তৃক কৃতকার্য ঘোষিত প্রার্থীদের ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী ২৬টি ক্যাডার সাধারণ ক্যাডার এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার এই দুই ক্যাটাগরিতে বিভক্ত।

ক. সাধারণ ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা।

খ. কারিগরি/পেশাগত ক্যাডারের প্রার্থীদের ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা।

ক. সাধারণ ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক নম্বর বণ্টন

ক্রমিক নম্বরআবশ্যিক বিষয়নম্বর বণ্টন
১.বাংলা২০০
২.ইংরেজি         ২০০
৩.বাংলাদেশ বিষয়াবলি২০০
৪.আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি১০০
৫.গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা১০০
৬.সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি১০০
মোট৯০০

প্রতিটি ২০০ নম্বরের পরীক্ষার সময় ৪ ঘণ্টা এবং প্রতিটি ১০০ নম্বরের পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা। প্রতিটি বিষয়ে পাশ নম্বর ৫০%। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রতিটি বিষয়ে ৫০% মার্ক না পেলেও আপনি লিখিত পরীক্ষায় পাস করবেন। অর্থাৎ ৯০০ নম্বরের মধ্যে সব বিষয় মিলিয়ে ৪৫০ নম্বর পেলেই আপনি ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন।

তবে মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি বিষয়ে ন্যূনতম ৩০% অর্থাৎ আপনাকে ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬০ নম্বর এবং ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩০ নম্বর পেতে হবে। এক্ষেত্রে মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কেউ যদি কোনো বিষয়ে ৩০% এর কম পান তাহলে তিনি কি ফেল করবেন? না, তিনি ফেল করবেন না। যে বিষয়ে তিনি ৩০% এর কম নম্বর পাবেন সেই বিষয়ের কোন নম্বর তার মোট নম্বরের সঙ্গে যোগ হবে না। ধরুন, কোনো পরীক্ষার্থী সাধারণ বিজ্ঞান পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ২৯ নম্বর পেলেন, তাহলে ওনার এই প্রাপ্ত নম্বর বাকি পাঁচটা বিষয়ের মোট নম্বরের সঙ্গে যোগ হবে না। ফলে সাধারণ বিজ্ঞানের এই ২৯ নম্বর বাদেই যদি পরীক্ষার্থী বাকি পাঁচটা বিষয়ে ন্যূনতম ৪৫০ নম্বর পান, তাহলে তিনি ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন।

খ.  কারিগরি/পেশাগত ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক নম্বর বণ্টন

ক্রমিক নম্বরআবশ্যিক বিষয়নম্বর বণ্টন
১.বাংলা১০০
২.ইংরেজি         ২০০
৩.বাংলাদেশ বিষয়াবলি২০০
৪.আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি১০০
৫.গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা১০০
৬.পদ-সংশ্লিষ্ট বিষয়২০০
মোট৯০০

একইভাবে টেকনিক্যাল ক্যাডারেও ৯০০ নম্বরের মধ্যে সব বিষয় মিলিয়ে ৪৫০ নম্বর পেলেই আপনি ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন। জেনারেল ক্যাডারের জন্য যেসব নিয়ম প্রযোজ্য, টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

পদ সংশ্লিষ্ট (Job-related) বিষয়ের পরীক্ষা

যে সকল প্রার্থী সাধারণ ও কারিগরি/পেশাগত উভয় ক্যাডারের পদের জন্য পছন্দক্রম দেবেন, তাদেরকে সাধারণ ক্যাডারের জন্য নির্ধারিত বিষয়ের ৯০০ নম্বরের অতিরিক্ত সংশ্লিষ্ট পদ বা সার্ভিসের জন্য প্রাসংগিক বিষয়ের ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। অর্থাৎ মোট ১১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

উভয় ক্যাডারে যে সাতটি বিষয়ের ওপর ১১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে তা নিম্নরূপ।

১। বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
২। ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৩। বাংলাদেশ বিষয়াবলি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৪। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ১০০ নম্বর
৫। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা (৫০+৫০)= ১০০ নম্বর
৬। সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি= ১০০ নম্বর
৭। স্নাতকে পঠিত বিষয়= ২০০ নম্বর

এখন কথা হলো, যারা শুধু জেনারেল বা টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য পরীক্ষা দেবেন, তাঁরা ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা দেবেন এবং ৪৫০ নম্বর পেলেই ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন। কিন্তু বোথ ক্যাডারদের তো ১১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে সে ক্ষেত্রে তাদের পাস নম্বর কত হবে?

উভয় ক্যাডারের ক্ষেত্রে প্রথমে নিচের বিষয়গুলোর ৯০০ নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হবে। এই ৯০০ নম্বরের মধ্যে প্রার্থী যদি ৪৫০ নম্বর পান, তাহলে তিনি জেনারেল ক্যাডারে ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন।

১। বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
২। ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৩। বাংলাদেশ বিষয়াবলি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৪। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ১০০ নম্বর
৫। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা (৫০+৫০)= ১০০ নম্বর
৬। সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি= ১০০ নম্বর

এরপর উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর মধ্যে থেকে বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মোট ২০০ (১০০+১০০) নম্বর বাদ দিয়ে এগুলোর পরিবর্তে স্নাতক পর্যায়ে পঠিত বিষয়ের ২০০ নম্বর যোগ করুন। এবার নিচের বিষয়গুলোর ৯০০ নম্বরের মধ্যে প্রার্থী যদি ৪৫০ পান, তাহলে আপনি টেকনিক্যাল ক্যাডারের ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন।

১। বাংলা প্রথম পত্র= ১০০ নম্বর
২। ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৩। বাংলাদেশ বিষয়াবলি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৪। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ১০০ নম্বর
৫। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা (৫০+৫০)= ১০০ নম্বর
৬। স্নাতকে পঠিত বিষয়= ২০০ নম্বর

এভাবে আপনিএকই সঙ্গে জেনারেল ক্যাডার এবং টেকনিক্যাল ক্যাডারে ভাইভার জন্য নির্বাচিত হন, তাহলে আপনি উভয় ক্যাডারে ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন।

বোথ ক্যাডারে আবেদন করে ১১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে টেকনিক্যাল পরীক্ষায় (স্নাতকে পঠিত বিষয়) ফেল করলেও আপনার মোট নম্বর যদি ৫৫০ নম্বর হয়, তাহলে আপনি বোথ ক্যাডারেই পাস করবেন। আর ৪৫০ নম্বর হলে শুধু জেনারেল ক্যাডারে পাস করবেন। এভাবে বোথ ক্যাডারে আবেদন করে শুধু টেকনিক্যাল ক্যাডারেও পাস আসা সম্ভব। তবে মনে রাখবেন যে, সব পরীক্ষায় আপনাকে উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই হবে।

ট্যাগঃ বর্তমান বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি কত স্তর বিশিষ্ট, বিসিএসে সর্বোচ্চ নম্বর, বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর কত, বিসিএস স্বল্প মেয়াদী লিখিত পরীক্ষার নাম্বার কত, বিসিএস লিখিত পরীক্ষার নাম্বার কত, Bortoman bcs porikkha poddhoti koto sthor bishistho, বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচী, বিসিএস লিখিত পরীক্ষার মানবন্টন

Related Articles

Back to top button
error: