অভাব দুর করতে ও ধন-সম্পদ বাড়াতে যে আমল করবেন।
জীবনে সকলেই সফল হতে চায়। কিন্তু জীবনে সফলতা কি সবার আসে? অনেকের আবার সামান্য পরিশ্রমে করেও জীবন বদলে যায়। আবার অনেকের কঠোর পরিশ্রমেও অভাব দূর হয় না।
রিজিক বৃদ্ধি, ব্যবসায় বরকত লাভ ও ধনী হওয়ার পরীক্ষিত আমল – সূরা আল-ওয়াকিয়া
সুখ-দুঃখ আসে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। একমাত্র তিনিই তার বান্দাকে দান করতে পারেন সফলতা। দূর করতে পারেন অভাব ও অনটন। তাই আমাদের অভাব দুর করতে ও ধন-সম্পদ বাড়াতে যে আমল বেশি বেশি করতে হবে। আল্লাহ চাহে তো দেখা মিলবে সচ্ছলতার। অভাব দুর হবে ও বাড়বে ধন-সম্পদ যে আমলে।
অভাব দুর করতে ও ধন-সম্পদ বাড়াতে যে আমল করবেন।
আমল ১
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলার ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ গুণবাচক নামের জিকির করবে; সে জান্নাতে যাবে। ’ দৈনিক জীবনে আল্লাহ তাআলার এ নামগুলোর জিকির আজকার ও আমলে রয়েছে আলাদা নানা ফজিলত ও উপকারিতা।
আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে একটি হল (اَلْوَاجِدُ) ‘আল-ওয়াজিদু’। নিরবে ও নির্জনে এ আমলটি করতে থাকলে আল্লাহ তাআলা ধণ-সম্পদ বৃদ্ধি করে দেন।
আল্লাহর গুণবাচক নাম (اَلْوَاجِدُ) ‘আল-ওয়াজিদু’:-
উচ্চারণ : ‘আল-ওয়াজিদু’
অর্থ : ‘এমন মুখাপেক্ষীহীন সত্তা, যিনি কারো কাছে কোনো কিছুর জন্য মুখাপেক্ষী নন’
আমল ২
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন— যে ব্যক্তি বেশি বেশি নিচের এই দোয়াটি পাঠ করবে তার অভাব দূর হয়ে যাবে।
অভাব দূর করতে দোয়া– “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ফাকরি, ওয়াল কিল্লাতি, ওয়াজজিল্লাতি, ওয়া আউজুবিকা মিন আন আজলিমা আও উজলিমা।”
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দরিদ্রতা থেকে। এবং আপনার কম দয়া থেকে ও অসম্মানী থেকে। এবং আমি আপনার কাছে আরও আশ্রয় চাচ্ছি— কাউকে জুলুম করা থেকে অথবা কারও দ্বারা অত্যাচারিত হওয়া থেকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ১৫৪৪)
আমল ৩ ইস্তেগফার পড়া
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে (আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিউ ওয়াতুবু ইলাইহি) আল্লাহতায়ালা তার সব সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা ও বিপদ মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যাবস্থা করে দেবেন। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ )
আমল ৪ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা৷ মাঝেমধ্যে দেখা সাক্ষাৎ করে আসা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি প্রিয় নবীকে (সা.) বলতে শুনেছি— যে ব্যক্তি তার জীবিকা দির্ঘ করতে চায় এবং বাড়াতে চায়, তার আয়ু সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। (বুখারি, হাদিস ৫৯৮৫)
আমল ৫ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
রাব্বুল আলামিন বান্দার প্রতি তখনই সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট হন, যখন তার বান্দা সব কিছু পাওয়ার পরও রবের অকৃতজ্ঞতা করে। তবে বান্দা যখন শুকরিয়া আদায় করেন, রাব্বুল আলামিন তার প্রতি খুশি হয়ে যান।
তার সকল বালা-মুসিবত অভাব-অনটন দূর করে দেন এবং শুকরিয়া আদায়ের ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহতায়ালার ঘোষণা— যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন। (সুরা ইবরাহিম: ৭)
আমল ৬ তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল (আল্লাহভীরুতা ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা) অবলম্বন করা।
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশাবলি পালন ও তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা ও সর্বদা আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা।
কারণ, যে আল্লাহর ওপর অটল ভরসা রাখে, তিনি তার সব কিছুর ব্যবস্থা করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ অবশ্যই তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন। নিশ্চয় তিনি প্রত্যেক জিনিসের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (সূরা আত -তালাক : ২-৩)
আমল ৭ সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করা।
প্রিয়নবী সা: ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে ‘সূরা ওয়াকিয়াহ’ পাঠ করবে সে কখনো অভাব-অনটনে পড়বে না। এ হাদিসের রাবি (বর্ণনাকারী) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: তার কন্যাদের প্রতি রাতে এ সূরা পাঠ করার নির্দেশ দিতেন। (মেশকাতুল মাসাবিহ : ২১৮১)
আমল ৮ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা।
আল্লাহর রাস্তায় কোনো কিছু দান করলে তা কখনই বিফলে যায় না। সে সম্পদ শেষ যায় না। বরং তা বাড়তে থাকেই। কুরআন কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সূরা সাবা : ৩৯)
আমল ৯ বিয়ে করা।
বিয়ের মাধ্যমেও সংসারে সচ্ছলতা আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তার রিজিক সাথেই নিয়েই আসে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ (সূরা আন নূর : ৩২) আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
ট্যাগঃ ইয়া রাজ্জাকু এর ফজিলত, ধন সম্পদ বৃদ্ধির টোটকা, ধন সম্পদ অর্জনের আমল, যে দোয়া পড়লে টাকার অভাব হয় না, সম্পদ রক্ষার দোয়া, সম্পদ বৃদ্ধির উপায়, কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে, জ্ঞান রিজিক বৃদ্ধির দোয়া