ছাদে যেভাবে করতে পারেন ড্রাগন ফলের চাষ, ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ – ছাদ বাগানে টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি, ছাদ বাগান থেকেও শখ ও বিসনেস দুটোই করা যায় কম যত্ন করে প্রচুর ফল.
ড্রাগন ফল, যা ক্যাকটাস জাতীয় গাছের ফল, আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল যা বর্তমানে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এটি গোলাপি বর্ণের, মিষ্ট স্বাদযুক্ত এবং ভিটামিন সি, মিনারেল, এবং ফাইবারের উৎকৃষ্ট উৎস।
ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ – ছাদ বাগানে টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি
ড্রাগন ফল চাষের উত্তম সময়:
ড্রাগন ফল সারা বছরই চাষ করা যায়, তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে চারা রোপণ করলে ফলন ভালো হয়।
উপযুক্ত পাত্র:
ছাদে চাষের জন্য মাটির টবে বা ড্রামে ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। ২০ ইঞ্চি আকারের ড্রাম ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় কারণ এতে গাছটি পর্যাপ্ত স্থান পাবে শিকর ছড়াতে।
উপযুক্ত মাটি:
ড্রাগন ফল চাষের জন্য উৎকৃষ্ট জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটি বেছে নেওয়া উচিত। মাটি প্রস্তুতির জন্য:
- মাটি প্রস্তুতি: বেলে দোআঁশ মাটি সংগ্রহ করে পরিষ্কার করুন।
- সার মিশ্রণ: মাটির সাথে ৫০ গ্রাম গোবর, ৫০ গ্রাম পটাশ সার, এবং ৫০ গ্রাম টি.এস.পি. সার মিশিয়ে ভালো করে মিশ্রণ করুন।
- ভিজানো: মাটি এবং সার মিশ্রণ পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিন।
- প্রস্তুতি: মাটি ১০-১২ দিন রেখে দিন, তারপর খুন্তি দিয়ে ঝুরঝুরে করুন।
চারা রোপণ:
- মাটি প্রস্তুতি: প্রস্তুতকৃত মাটি শুষ্ক হলে, ড্রামে বা পাত্রে ভরাট করুন।
- রোপণ: ভালো জাতের কাটিং চারা মাটিতে রোপণ করুন।
সেচ ও পরিচর্যা:
- সেচ: ড্রাগন ফল গাছ খুব বেশি পানি পছন্দ করে না। তাই মাঝে মাঝে পরিমাণমতো পানি দিন। গোড়া পর্যাপ্ত পানি না জমে তা নিশ্চিত করুন।
- ড্রামের ছিদ্র: অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে ড্রামের নিচে ৪-৫টি ছিদ্র করুন।
- গাছের সাপোর্ট: গাছের ডালপালা লতার মতো হওয়ার কারণে গাছের হালকা বৃদ্ধির সাথে সাথেই খুঁটির সাথে বেঁধে দিন যাতে গাছটি ঢলে না পড়ে।
- স্থান: চারা লাগানোর পর ড্রামটি রোদযুক্ত স্থানে রাখুন।
ফল সংগ্রহ:
ড্রাগন ফলের কাটিং চারা রোপণের ১ বছর থেকে ১৮ মাস বয়সে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফুল ফোঁটার ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
এই সহজ পদ্ধতিতে ছাদ বাগানে ড্রাগন ফল চাষ করে আপনি উপভোগ করতে পারবেন সুস্বাদু ফল এবং একই সাথে বাড়ির সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করতে পারবেন।
ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি, পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফল কেন খাবেন?
এই ড্রাগন ফল বিদেশি হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এবং প্রচুর পরিমাণে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও এটি একটি দামি ফল হিসেবে বিবেচিত হয়, তার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এখানে দেওয়া হলো ড্রাগন ফলের খাওয়ার ৮টি কারণ:
১. রক্তের চর্বি কমায় এবং হজমে সাহায্য করে
ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর আঁশ থাকে যা রক্তের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এটি হজমের প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
২. ক্যানসার প্রতিরোধী
ড্রাগন ফলে থাকা লাইকোপেন ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতিকারক অক্সিডেন্টস থেকে রক্ষা করে।
৩. দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
ড্রাগন ফল ক্যারোটিন সমৃদ্ধ, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করতে ভূমিকা রাখে।
৪. বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে
ড্রাগন ফলে থাকা প্রোটিন শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং পেশী ও ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে।
৫. হাড় শক্ত করে এবং দাঁত মজবুত রাখে
ড্রাগন ফলে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়কে শক্ত এবং দাঁতকে মজবুত রাখে। নারীদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে হাড়ের সমস্যা প্রতিরোধে।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ড্রাগন ফলে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি ত্বককে সতেজ রাখতে, বলিরেখা দূর করতে এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
৭. রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়
ড্রাগন ফলে উচ্চ পরিমাণ আয়রন থাকে যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়। এটি কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা এবং প্রসূতিদের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
৮. ওজন কমাতে সাহায্য করে
ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার এবং জলীয় অংশ থাকে, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। এটি দীর্ঘ সময় পেট পূর্ণ রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
ড্রাগন ফল কীভাবে খাবেন:
আপনি খোসা ফেলে কেটে খেতে পারেন অথবা জুস হিসেবে উপভোগ করতে পারেন। সালাদে ব্যবহার করা যায় এবং রান্নার মাধ্যমে পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে এটি কাঁচা খাওয়াই ভালো।
এই কারণগুলোকে মাথায় রেখে ড্রাগন ফল নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যাবে।