গর্ভাবস্থায় নামাজ পড়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় আমল, গর্ভাবস্থায় দোয়া, মহিলাদের চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় নামাজ পড়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় কোন সূরা পড়তে হয়, গর্ভবতী মায়ের বসার নিয়ম, ইশারায় সিজদা দেওয়ার নিয়ম, গর্ভবতী মহিলাদের কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয়, গর্ভাবস্থায় বাচ্চা সুরক্ষিত রাখার আমল, গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় মায়েদের কোরআনি আমল, গর্ভবতী মায়ের আমল ও দোয়া। প্রকৃতপক্ষে গর্ভাবস্থার জন্য, গর্ভবতী কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয়, গর্ভবতী নারীকে কি নির্দিষ্ট কিছু সূরা পড়ার পরামর্শ দেয়া, গর্ভবতী নারী যেভাবে নামাজ আদায় করবে ।
গর্ভাবস্থায় নামাজ পড়ার নিয়ম
একজন গর্ভবতী নারী অসুস্থ ব্যক্তির মতো নামাজ আদায় করবে। গর্ভবতী অবস্থায় সিজদা দিতে কষ্ট হলে তিনি হাত জমিনে রেখে তার ওপর সিজদা করবে, বা হাত সামনে রেখে যতটুকু ঝুঁকতে পারেন ততটুকু ঝুঁকে ইশারায় সিজদা করবে। তিনি ইশারায় সিজদার সময় সামনে কোনো টেবিল, বালিশ বা অন্য কিছু রেখে তাতে সিজদা করবে না।
গর্ভবতী নারী তার শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী একাধিক বিকল্পের কোনো একটি গ্রহণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন যে, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো, যদি না পারো তাহলে বসে নামাজ পড়ো, যদি তা-ও না পারো তবে ইশারা করে নামাজ আদায় করো।
(বুখারি, হাদিস : ১০৫০)
যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে অক্ষম, সে বসে বসে রুকু-সিজদা আদায় করে তবে নামাজ পড়বে। আবার যে ব্যক্তি বসে রুকু-সিজদা করবে, সে রুকু থেকে সিজদায় সামান্য বেশি ঝুঁকবে, তা না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৬)
সিজদা করার জন্য কোনো বস্তু ওপরে তুলে সেটার ওপর সিজদা করবার প্রয়োজন নেই। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৩৮১৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/২৭৩)
কেউ যদি অসুস্থতার কারণে বসে নামাজ পড়তে না চায়, তবে সে শুয়ে ইশারার মাধ্যমে নামাজ পড়বে। তার পা কিবলার দিকে করে তাকে শোয়াতে হবে।
মাথা সামান্য ওপরে তুলে শোয়াবে। যাতে তার চেহারা কিবলার দিকে হয়। এরপর ইশারা করে সে রুকু-সিজদা করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/২৭৩)
গর্ভাবস্থায় আমল ও দোয়া
গর্ভস্থ সন্তান আনুমানিক প্রায় ২০তম সপ্তাহের পর কিছু শোনার সক্ষমতা অর্জন করে। মা প্রতিদিন কিছু সময় তার জন্য কোরআন তেলাওয়াত করে বাচ্চা ও কোরআনের মাঝে সুন্দর সম্পর্ক জুড়ে দিতে পারেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন যে, তোমাদের ওপর অবশ্যক হলো, তোমরা কোরআন শিক্ষাগ্রহণ করবে। তোমাদের সন্তানদের অবশ্যই কোরআন শিক্ষা দেবে। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। তার তমাদের তার প্রতিদানও দেওয়া হবে। (বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ইবনে বাত্তাল ৪৬ পৃষ্ঠা)
বুজুর্গ আলেমগুণ গর্ভাবস্থায় কিছু কোরআনিক আমলের কথা বলেছেন। এই সুরাগুলো পাঠ করলে উপকার পাওয়া যায়। সন্তান নেক ও সুন্দর হয়। এই সুরাগুলো গর্ভাবস্থার বিভিন্ন মাসে পাঠ করতে হয়।
- গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে সুরা-আল ইমরান পড়লে তার সন্তান দামি হবে।
- দ্বিতীয় মাসে গর্ভাবস্থার সুরা-ইউসুফ পড়লে সন্তান সুন্দর হয়।
- গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসে সুরা মারিয়াম পড়লে সন্তান সহিষ্ণু হবে।
- চতুর্থ মাসে গর্ভাবস্থার সুরা লোকমান পড়লে সন্তান বুদ্ধিমান হবে।
- পঞ্চম মাসে সুরা মুহাম্মদ পড়লে সন্তান চরিত্রবান হবে।
- গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ মাসে গর্ভাবস্থার সুরা-ইয়াসিন পড়লে সন্তান জ্ঞানী হয়।
- গর্ভাবস্থার সপ্তম, অষ্ঠম, নবম ও দ্বশম মাসে সুরা-ইউসুফ, মুহাম্মদ ও ইব্রারাহিম কিছু কিছু পড়বে।
এছারাও-
- গর্ভাবস্থায় প্রসব ব্যাথা উঠলে সুরা-ইনশিকাক পড়ে পানিতে ফুক দিয়ে পান করলে ব্যথা কমে যাবে।
- গর্ভাবতী নারী ঘুমের পূর্বে অবশ্যই চার কুল তথা সুরা কাফিরূন, সুরা ইখলাস ও ফালাক ও সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে সারা শরীরে হাত বুলিয় নিবে। এভাবে তিনবার করবেন।
গর্ভাবস্থার নিয়মিত দোয়ার অভ্যাস করুন। গর্ভকালীন সময়ে মাঝে মাঝে অসহায়বোধ হয়। অনেকের মনে হয়, না-জানি এবার আমি মরে যাব কিনা! তাই গর্ভকালীন সময়ে দোয়ায় বেশি লিপ্ত হতে হয়। এসময়ের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।
আল্লাহ বলেন যে, أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ বলো তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন। (সুরা নামল ৬২)
তাছাড়া আপনি আপনার সন্তানের মা হতে যাচ্ছেন। আর মায়ের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। সুতরাং নেক, সুস্থ ও সুন্দর সন্তান কামনা করে বার বার আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
পুত্র-সন্তান লাভে যে দোয়া পড়বেন
رَبِّ هَبْ لِىْ مِنَ الصّٰلِحِيْنَ
উচ্চারণ: রব্বি হাবলি মিনাস সলিহিন।
অর্থঃ আমার প্রতিপালক! আমাকে সৎ সন্তান দান করুন।
এছাড়াও কোনো গর্ভবর্তী মহিলা যদি আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম (اَلْمُتَعَالِىْ) ‘আল-মুতাআলি’ এবং (اَلْمُبْدِئُ) ‘আল-মুবদিয়ু’ পড়তে থাকে তাহলে ওই মহিলা তার গর্ভকালীন কষ্ট থেকে মুক্তি পায়।