শিক্ষনীয় গল্প, বাংলা গল্প, জীবনের গল্প, হাসির গল্প, গল্প রোমান্টিক, প্রেমের গল্প, ভালো গল্প, রূপকথার বাংলা গল্প, সফলতার শিক্ষনীয় গল্প, শিক্ষনীয় বাস্তব গল্প, ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প, হাদীসের শিক্ষনীয় গল্প, ছোট ছোট শিক্ষনীয় গল্প, শিক্ষনীয় ছোট গল্প pdf, শিক্ষনীয় কষ্টের গল্প, শিক্ষনীয় মোটিভেশনাল গল্প।
জানলার ফাঁক দিয়ে বাহিরের অবস্থা বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছে বাহার। বয়স তার ১০ হবে আর দিন খানেক দিন বাদেই। তার বন্ধুরা আশেপাশে আছে পাশে আছে কিনা তারই খোজ চলছে। ঘুম থেকে উঠেই জানলার বাহিরে তাকানো তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মা উঠেন অনেক সকালে। বাবার কোন খোজ নাই ৬ মাস হল। একদিন সকালে মাছ ধরতে উঠেছিল, বউ কে বলে গেছিল আজ মাছ বেশি ধরা পরলে ভাল বাজার সদাই করব, কতদিন ভালো কিছু খাওয়াতে পারি না ছেলেটাকে। সেই যে গেল এখনো এল না।
বাহার আজ সকালে বাহিরে তাকিয়ে দেখল এক পাখি ছটফট করছে। দৌড়ে সে পাখির কাছে গেল। পাখিটা বাহার কে দেখে ভয়ে যে উড়ে যাবে তার শক্তি নেই। বাহার পাখি কে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরল। পানি আর কিছু খাবার খেতে দিল। বাহারের আরও দুটো বন্ধু এসে যোগ দিল পাখির সেবায়। বাহারের মা ওদিকে বাহার কে খাবার খেতে ডাক পারছে। কিন্তু বাহার তার ডাক কানেই তুলছে না। তার মা আশেপাশের কিছু বাসায় কাজ করে সংসার কোন মতে চালিয়ে নেয়। ছেলেকে না খাইয়ে কাজেও যেতে পারছেন না তিনি। তাই অনেকটা জোর করেই বাহারকে টেনে এনে খাওয়াতে বসালেন। বাহার খুবই বিরক্ত হল আর ফুপিয়ে কান্না শুরু করল।
বাহার কোন মতে খেয়েই পাখির কাছে দৌড় দিল কিন্তু সে আসতে আসতে পাখিটি আর বেচে রইল না। বাহার অনেক কষ্ট পেল আর বন্ধুরা মিলে বাড়ির পাশেই উঠানে পাখিটিকে কবর দিয়ে দিল। মনের কষ্টে সে বন্ধুদের বিদায় দিয়ে বাসায় এসে শুয়ে পরল। বাহার ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখল তার বাবা তাকে বলছে আমি এমনই ছট ফট করে মারা গেছিলাম, তোর কাছে ফিরে আসা হলো না বাবা। মা বাসায় ফিরে এসে দেখল ছেলের গায়ে প্রচন্ড জ্বর। কয়েকদিন আর বাহারের মায়ের যাওয়া হল না কাজে।
ছেলের জ্বর একটু কম দেখে আজ কাজে যাবার সাহস করলেন। বাহারকে ভালো ভাবে খাইয়ে আর বিশ্রাম নিতে বলে তিনি কাজে গেলেন। বাহার বেশ কিছু ক্ষন শুয়ে থেকে বাহিরে বের হলো, চলে গেল নদীর তীরে। ওখানেই বশে রইল। ওদিকে বাহারের মা তাকে চারিপাশে খোঁজা খুজি শুরু করলেন। খুজতে খুজতে নদীর ধারে ছেলেকে পেলেন। ছেলের অসহায় মুখ দেখে রাগ করতে পারলেন না। বাহার মা কে জড়িয়ে ধরে বলল, ” বাবা আর ফিরে আসবে না মা, বাবা মইরা গেছে”। দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে সন্ধ্যায় বাসার দিকে ফিরল।
বেশ কিছুদিন পরে বাহারের মামা এলো বেড়াতে। তিনি বাহারের মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছেন। বাহারের মা কে কোনরকমে রাজি করিয়ে তবেই তিনি ফিরলেন। কিছু দিনের মধ্যেই আবার বিয়ে করলেন বাহারের মা। বাহার একা হয়ে যেতে লাগলো। মানসিক এক যন্ত্রনা শুরু হলো তার। কোন কিছুতেই আর মন বসাতে পারে না। খেলতে ভালো লাগে না বন্ধুদের সাথে, কারো সাথে তেমন কথা বলতেও ভালো লাগে না।
এক দিন মনের দুখে ঘর ছেরে হাটা শুরু করল বাহার। সে জানে না তার গন্তব্য। হাটতে হাটতে তার প্রচন্ড খুধা লেগে গেল। এক বনের পাশ থেকে হেটে যাচ্ছিল তখন। খাবারের আশায় বনের ভিতরে ঢুকে পরল। বনের পাশেই এক ক্ষুধার্ত মা বানর তার ক্ষুধার্ত বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য চিৎকার করছিল। এ পাশ ও পাশ ঘুরে কোন খাবার পাচ্ছিল না আবার বাচ্চাকে রেখে সে দুরেও খাবারের খোঁজে যেতে পারছে না। ও দিকে বাচ্চাটা খুধায় আধমরা হয়ে ছিল। মায়ের নিজেরও ক্ষুধা লেগেছিল কিন্তু বাচ্চার দিকে চেয়ে তার নিজের কথায় সে ভুলে গেছে।
বাহার খুবই কষ্ট পেল এই দৃশ্য দেখে। সে তাদের খাবারের খোঁজ শুরু করল। বেশ দূরে এক বাড়ীর পাশে একটি কলা গাছ দেখল বাহার তারপর দৌড়ে সেখান থেকে কলা এনে সেই মা আর বাচ্চা বানরকে খেতে দিল। বাহারের নিজের মায়ের কথা মনে পরল। তার বাবার চলে যাবার পরে তার এভাবেই কষ্টে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বাহার আর একটুও দেরী না করে রওনা হল তার নিজের বাড়ীর পথে। আর মনে মনে শপথ করল কখনই সে তার মা কে কষ্ট দিবে না।