বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আইইএলটিএস, জিআরই, জিম্যাট, টোফেল ও স্যাট পরীক্ষা
বিদেশে উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকের কাছেই এক স্বপ্ন। বাংলাদেশে অনেক মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেবল মাত্র নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে অনেক সময় বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয় না। উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিদেশে যাওয়াটা আমাদের অনেকের কাছেই বেশ কষ্টসাধ্য মনে হলেও বাস্তবে আসলে তা নয়।
দেশের বাইরে পড়াশোনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বেশ আগে থেকে প্রস্তুতি প্রয়োজন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা,অস্ট্রেলিয়া,নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে প্রধান ভাষা ইংরেজী হওয়ায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিশেষ অসুবিধা হয় না। কিন্তু চীন, জাপান, রাশিয়া, ফ্রান্স বা জার্মানীর মত দেশগুলোয় প্রধান ভাষা ইংরেজী নয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব দেশে পড়তে যেতে হলে ঐ দেশের ভাষাটা শিখে গেলে সুবিধা হয়। কিন্তু এসব দেশেও ইংরেজীতে পড়াশোনার সুযোগ আছে।
উচ্চশিক্ষার জন্য যেখানেই যেতে চান না কেন, আপনাকে কিছু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এবং এ সকল পরীক্ষায় ভাল স্কোর তুলতে হবে। এই সব পরীক্ষার মধ্যে আছে-
- আইইএলটিএস
- টোফেল
- জিআরই
- জিম্যাট
- স্যাট
আইইএলটিএস
‘আইইএলটিএস’ হচ্ছে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সনদ, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। IELTS (The Inteational English Language Testing System) । যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় তাদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিংবা ভিসার জন্য আবেদন করতে চাইলে ভালো আইইএলটিএস স্কোর করতে হয়। আইইএলটিএস পরীক্ষাপদ্ধতি সাধারণত দুই ধরনের হোয়-‘একাডেমিক’ ও ‘জেনারেল’। উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যেতে ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের ‘একাডেমিক আইইএলটিএস’ এ টেস্টে অংশ নিতে হয়। যে কেউ চাইলে এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। এ জন্য কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না।
স্যাট
স্কলাসটিক অ্যাপটিচ্যুড টেস্ট এবং স্কলাসটিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট সংক্ষেপে পরিচিত স্যাট নামে। আমেরিকার কলেজগুলোতে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার জন্য আপনার স্যাট স্কোর থাকা প্রয়োজন। আমেরিকার অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কলেজ বোর্ড স্যাটের সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে। ১৯০১ সাল থেকে চালু হওয়া এ পরীক্ষার নাম ও পরীক্ষার পদ্ধতি বেশ কয়েকবারই পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে নিয়ম অনুযায়ী স্যাট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় তিন ঘণ্টা ৪৫ মিনিট।
টোফেল
বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজির পরীক্ষা হল (TOEFL-The Test of English as a Foreign Language)। প্রাতিষ্ঠানিক ইংরেজি বোঝার ক্ষমতা এ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয়। বিদেশে অবস্থানরত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার অন্যতম প্রয়োজনীয় পন্থার একটি এই টোফেল পরীক্ষা। টোফেল পরীক্ষার ফলাফল দুই বছরের জন্য কার্যকর থাকে। এর কারণ হল, এর পরে একজন ব্যক্তির ইংরেজি বলা ও বোঝার ক্ষমতার পরিবর্তন হতে পারে। বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সদ্য টোয়েফল দেওয়া ফলাফলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
জিআরই
“গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন (Graduate Record Examination)” –কে সংক্ষেপে বলা হয় “জি আর ই (GRE)”। এটি এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিস (ETS) –এর একটি রেজিস্টার্ড এডুকেশনাল ব্র্যান্ড, তাই একে লেখা হয় GRE। আমেরিকার ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে (ব্যাচেলর ডিগ্রির পর এমএস/ পিএইচডি প্রোগ্রাম) ভর্তির জন্য জি আর ই অত্যন্ত জরুরি।
GRE একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড পরীক্ষা যা অনেক দেশের অনেক ইউনিভার্সিটিতে (বিশেষ করে উত্তর আমেরিকাতে) গ্র্যাজুয়েট স্টাডি (মাস্টার্স বা পিএইচডি) করার জন্য লাগে। প্রধানত science & arts ব্যকগ্রাউন্ড এর স্টুডেন্টদের এটা লাগে। Commerce ব্যকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টদের জন্য লাগে GMAT; তবে অনেক বিজনেস স্কুল আজকাল GRE একসেপ্ট করছে।
জিম্যাট
জিম্যাট (GMAT) এক ধরণের মানদন্ড নির্ধারণকারী পরীক্ষা (Standardized Test)। যার পুরো নাম Graduate Management Admission Test। সাধারণ ব্যাবসায়িক প্রশাসন সম্পর্কিত ডিগ্রী (MBA) নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে চাইলে জিম্যাট দরকার হয়। জিম্যাট পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষা নেওয়া, মানদন্ড নির্ধারণ করা-এ জাতীয় সব কাজই করে থাকে GMAC (Graduate Management Admission Council)
জিআরই, জিম্যাট, স্যাট ও টোফেল প্রস্তুতি সংক্রান্ত সমস্যা
এই সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য অনলাইনে আপনি প্রচুর রিসোর্স পাবেন। এছাড়া রয়েছে বই ও ভিডিও টিউটোরিয়াল। বাংলাদেশে আছে বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার, তাছাড়া বেশ কিছু বিদেশী এডুকেশনাল ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে অনলাইনে কোর্স করতে পারবেন। কিন্তু এই সব অনলাইন কোর্স করার জন্য অনলাইনে পেমেন্ট করতে হয়। অনলাইনে পেমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও নানা কারণে পিছিয়ে থাকার কারণে এই সব কাজে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। তাহলে জিআরই, জিম্যাট, স্যাট ও টোফেল প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সমাধান কি?
জিআরই, জিম্যাট, স্যাট ও টোফেল এর রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
স্যাট ও টোফেল, জিআরই, জি-ম্যাট পরীক্ষার ফরম এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য পেতে হলে আপনাকে আমেরিকান সেন্টারে যোগাযোগ করতে হবে। দুই ভাবে সেখানে নিবন্ধন করা যাবে। অনলাইন ও ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে। যাঁদের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড আছে, তাঁরা সহজে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। আর একটি উপায় হল যেসব ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের কাজ করে তাঁদের মাধ্যমে ব্যাংক ড্রাফট করে নিবন্ধন করতে হবে।
- টোফেলের জন্য লাগবে ১৫০ ডলার।
- স্যাট-১ -এর জন্য লাগবে ৭১ ডলার।
- জিআরই-১৯০ ডলার
- জি-ম্যাট -২৫০ ডলার
অনলাইনে পরীক্ষার সাত দিন আগে আপনার নিবন্ধন করলেই হবে। টোফেল, স্যাট, জিআরই পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাংক ড্রাফট করে নিবন্ধন করতে চাইলে পরীক্ষার অন্তত চার সপ্তাহ আগে তা করতে হবে। যদিও জি-ম্যাটের ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহ আগে ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে। খেয়াল রাখবেন নিবন্ধনের পর পরীক্ষার সময় যেন ছয় মাস পার হয়ে না যায়। আর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অবশ্যই পাসপোর্ট থাকতে হবে।
পরীক্ষার ফিস পেমেন্ট সংক্রান্ত সমস্যা
আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী প্রতিবছর এই সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নেয়। তবে তাদের প্রায় সবাই পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময় একটা সমস্যায় পরে। তা হচ্ছে হল কীভাবে জিআরই, জিম্যাট, স্যাট ও টোফেল পরীক্ষার ফি পরিশোধ করব? যেহেতু এই সকল পরীক্ষার (আইইএলটিএস ব্যতিত) ফিস অনলাইনে পেমেন্ট করতে হয়, তাই বাংলাদেশের থেকে ফি প্রদান করা বেশ ঝামেলার। আমাদের দেশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে এক্সাম ফি প্রদান করে থাকে। এজেন্টদের কমিশন দিতে যেয়ে একজন শিক্ষার্থীকে অনেক অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়। ডাচ বাংলা ব্যাংক পরীক্ষার ফি প্রদানের জন্য এক ধরণের ভার্চুয়াল কার্ড ইস্যু করে কিন্তু তাতে অনেক বেশি চার্জ দিতে হয় এবং আগে থেকে কার্ড ইস্যু না করতে পারলে বেশ হয়রানির শিকার হতে হয়! তাহলে শিক্ষার্থীদের সহজ পেমেন্টের সমাধান কি?
গ্লোবাল পেমেন্ট সার্ভিস QCard বাংলাদেশে সার্ভিস কার্যক্রম শুরু করেছে। এই প্রিপেইড কার্ড দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করা যায়। কিন্তু যে তথ্যটা অনেকেই জানেন না, তা হল QCard এর দ্বারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফিস প্রদান করা যায়! এছাড়াও আপনি যেকোনো বিদেশী ওয়েবসাইট থেকে ভাল মানের কোর্স করে এই কার্ড দিয়ে পরিশোধ করতে পারবেন। পরীক্ষার পর বিদেশে যাওয়ার জন্য এপ্লাই করতে গেলে এপ্লাই ফর্ম ফিল আপ করতেও অনলাইনে পেমেন্ট করা লাগে সেই কাজেও আপনাকে সাহায্য করবে এই কিউ কার্ড! বিদেশে ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি ফি দেওয়া, টিউশন ফি দেওয়া- এই সব পেমেন্ট করা যাবে এর মাধ্যমে।