ভার্চুয়াল নিপীড়ন ও সাইবার বুলিং প্রসঙ্গে
ভার্চুয়াল হয়রানি
এই ভার্চুয়াল হয়রানি অবশ্যই একটি গুরতর অপরাধ। অনলাইনে অনাকাঙ্খিত ক্রিয়াকলাপে বাধ্য করে এমন যে কোন স্মৃতি একটি বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা যা পরবর্তিতে অপ্রীতিকর পরিণতি তৈরী করতে পারে, এমনকি নিজের উপর, সমাজের উপর বিশ্বাসকেও নাড়া দিতে পারে।পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৪১ শতাংশ আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্ক অনলাইনে কয়েক ধরণের হয়রানির শিকার হয়েছেন। আরও বিস্ময়কর, পাঁচ জনের মধ্যে একজন চূড়ান্ত ফর্মাল ডিজিটাল হয়রানির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, যার মধ্যে অনলাইন অনাকাঙ্খিত হয়রানি রয়েছে।
প্রথমেই দেখে নেয়া যাক এই ভার্চুয়াল অনাকাঙ্খিত হয়রানি ধরণ-
যেহেতু আমরা আমাদের প্রচুর সময় অনলাইনে ব্যয় করি, তাই ভার্চুয়াল অনাকাঙ্খিত হয়রানি একটি বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে, কখনও কখনও তা উপেক্ষা করা যায় না। স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য আমরা ক্রমাগত সংযুক্ত রয়েছি একে অপরের সাথে। এই প্রযুক্তির দ্বারা হয়রানকারীরা আরো সক্রিয় হয়ে উঠছে।
অনলাইন অনাকাঙ্খিত হয়রানি দুটি বিভাগে পড়ে- ভুক্তভোগী অপ্রত্যাশিত মেসেজ বা ম্যাটেরিয়ালস পাচ্ছেন। তাকে ইমেইল, টেক্সট বা মেসেজ পাঠানো হচ্ছে যা অনাকাঙ্খিত সম্পর্কিত শব্দ বা ছবি বহন করে। এবং ভুক্তভুগীর কোন কন্টেন্ট প্রকাশ করে হচ্ছে। হয়রানকারী ভুক্তভুগীকে প্রস্তাব দিতে পারে নিজে দের বা অন্যের অনুপযুক্ত ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে।
১. আপনার পরিচিতি, অতি পরিচিত, সল্প পরিচিত, সদ্য পরিচিত বা অপরিচিত কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায়, মেসেজ বা ফোন কল করে আপনার সাথে আজাইরা আলাপের এক পর্যায়ে অনাকাঙ্খিত কথা বলা শুরু করবে| আপনি ভদ্রতার খাতিরে কোন রকমে এড়িয়ে যেতে চাইলেও এরা চালিয়ে যাবে| সাধারণত সমাজের অতি শিক্ষিত মুখোশধারী লোকেরাই এই পন্থা অবলম্বন করে কারন এরা সমাজে নিজের মান রক্ষা করবার জন্য কারো বাসায় যেয়ে বা রাস্তাঘাটে কিছু করতে পারে না|
২. ভুক্তভোগীর অনাকাঙ্খিত মন্তব্য বা গুজব- সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টের নিচে অত্যন্ত বাজে মন্তব্য করে একটি পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করে এক গোষ্ঠী। এরা সাধারণত ফেক আইডি খুলে এই ধরনের মন্তব্য করে।
৩. এছাড়াও রয়েছে ভুক্তভোগীর অনাকাঙ্খিত ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে মন্তব্য বা গুজব এবং সম্মতি ছাড়াই অনাকাঙ্খিত সুস্পষ্ট ছবি শেয়ার করা ইত্যাদি।
এই শিক্ষিত বা অশিক্ষিত নিকৃষ্ঠ শ্রেণীর লোকেরা যাদের টার্গেট করে-
অনলাইন অনাকাঙ্খিত হয়রানির বিভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রায়শই অপ্রীতিকর ছবি বা অনাকাঙ্খিত তথ্য পোস্ট করে (সত্য হোক বা না হোক) ভুক্তভুগিকে লজ্জা দেওয়ার জন্য করা হয়। কিছু হয়রানকারী ব্যক্তি ভুক্তভুগীর ব্যক্তিগত বিষয় জানতে পারে এবং অনলাইনে তার সুযোগ নিতে পারে। তবে ভার্চুয়াল অনাকাঙ্খিত হয়রানি অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
১. এরা প্রথমে কথা বলে মন বোঝার চেষ্টা করে ভুক্তভোগীর তারপর সুযোগ বুঝে হয়রানিমূলক কথা শুরু করে। যে কেউই এমন হেনস্তার সম্মুখীন হতে পারে। হতে পারে সে অল্প বয়সী কন্যা, নিজেরই আপন কাজিন, সদ্য বিশ্ব বিদ্যালয়ে বা কলেজে প্রবেশ করা কেউ বা নিজের কন্যা সমতুল্য বয়সের কেউ।
২. চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে, ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়ে বা বিয়ে করবে সেই কথা বলে, কর্ম ক্ষেত্র বা বাড়তি সুবিধা দেবার প্রলোভন দেখিয়ে সুযোগ নেবার চেষ্টা করে।
৩. আপনার গোপন কোন ভিডিও বা ছবি প্রকাশ করবার ভয় দেখিয়ে আপনাকে মানসিক ভাবে হেনস্তা কিরবে|
এ থেকে যেভাবে পরিত্রান পাবেন-
ভার্চুয়াল হয়রানি শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে কারণ এটি অনলাইনে ঘটে, প্রকাশ্যে নয়। সেল্ফ ডিফেন্সের কিছু টেকনিক আপনাকে অনুসরণ করতে হবে| এদের যেহেতু লজ্জা নাই তাই এদের সম্মান বাচিয়ে আপনার লাভ নাই| মনে রাখবেন আপনার নিরাবতা মানে আরও অনেক নারীর মানসিক হেনস্তা|
১. সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ব্লক করে আপনি নিজে মুক্তি পাচ্ছেন কিন্তু সবাই তো পাবে না। স্ক্রিনশট অথবা কল রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিন| এদের মুখোশ খুলে দিন| সাথে সম্ভব হলে পরিবারের লোকজনকেও ট্যাগ দিয়ে দিন|
২. নিজের চারপাশের মানুষদের সচেতন করুন| শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগত নতুন জুনিয়ারদের সচেতন করুন| তাদেরকে ভার্চুয়াল হয়রানি ও সেল্ফ ডিফেন্সের কৌশল সম্পর্কে জানান।
৩.একটি শক্তিশালী অনাকাঙ্খিত হয়রানির নীতি থাকা উচিত যেখানে অনলাইন আচরণ কেমন হবে তা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৪. এছাড়াও, ভার্চুয়াল অনাকাঙ্খিত হয়রানির ক্ষেত্রে আপনার কর্মক্ষেত্রকে কীভাবে নিরাপদ করা যায় সে সম্পর্কে কর্মীদের মতামত নিন ও সকলকে উত্সাহিত করুন।
৫. যে কোন অভিযোগ গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। সর্বোপরি, ভার্চুয়াল অনাকাঙ্খিত হয়রানির অভিযোগ পাওয়ার পরে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।
৬. ডেডিকেটেড ফোন নম্বর, ইমেল ঠিকানা এবং ওয়েবফর্মের মতো একাধিক প্রতিবেদনের সুযোগগুলি সরবরাহ করুন।
৭. অবশেষে, সকলকেই ভার্চুয়াল অনাকাঙ্খিতহয়রানির বিষয়ে কথা বলতে উত্সাহিত করুন। হয়রানির প্রতিবেদন সুরক্ষিত এবং সহজ করুন।
লেখক- সুরাইয়া ইয়াসমিন, ব্লগার