
নবজাতকের জীবনের প্রথম খাদ্যই হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। তবে অনেক সময় নতুন মায়েরা দুধের ঘাটতির সমস্যায় পড়েন। এটা খুব সাধারণ এবং ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বুকের দুধ বাড়ানো সম্ভব। চলুন তবে জেনে নেই মায়ের বুকে দুধ না আসলে করণীয় –
কেন দুধ কম আসে?
- সিজারিয়ান অপারেশনের পর বিলম্বে দুধ আসা
- মা অপুষ্টিতে ভোগলে
- বারবার শিশুকে দুধ না খাওয়ানো
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগ
- হরমোনজনিত সমস্যা (যেমন থাইরয়েড)
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মায়ের বুকে দুধ বাড়ানোর কার্যকর উপায়
১. বারবার শিশুকে দুধ খাওয়ান
দুধ উৎপাদনের প্রধান নিয়ম হলো “চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ”। শিশুকে প্রতি ২–৩ ঘণ্টা পরপর বা যখনই সে ক্ষুধার লক্ষণ দেখায়, দুধ খাওয়ান।
২. সঠিকভাবে ল্যাচ করান
শিশু যদি স্তনের সঙ্গে সঠিকভাবে সংযুক্ত না হয়, দুধ বের হতে পারে না। তাই সঠিক পজিশন ও ল্যাচ নিশ্চিত করা জরুরি।
৩. মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন
চিন্তা ও উদ্বেগ দুধের প্রবাহে বাধা দেয়। চেষ্টা করুন শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে দুধ খাওয়াতে।
৪. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
বেশি পানি পান করুন। দুধ বাড়ানোর জন্য নিচের খাবারগুলো উপকারী:
- মেথি/ফেনুগ্রিক
- মালাইযুক্ত দুধ
- রসুন
- ছোলা
- লাউ
- খেজুর ও গুড়
৫. স্তন দুধ পাম্প করুন
যদি শিশু দুধ না চুষে, তাহলে হাত বা ব্রেস্ট পাম্প দিয়ে দুধ বের করে নিন। এতে দুধ তৈরি হওয়ার সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি সব চেষ্টা করেও দুধ না আসে, তাহলে একজন ল্যাকটেশন কনসালটেন্ট বা স্তন্যদুগ্ধ পরামর্শদাতা‘র সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

সিজারের পর বুকে দুধ না আসলে করণীয়
সিজারিয়ান ডেলিভারির পর দুধ আসতে কিছুটা সময় লাগে। তবে নিয়মিত স্তন্যপান করালে দুধ আসা শুরু হয়।
করণীয়:
- শিশুকে নিয়মিত বুকে চেপে ধরুন, এমনকি দুধ না এলেও।
- তাড়াতাড়ি ফর্মুলা শুরু না করে অপেক্ষা করুন।
- স্তন্যপান করার পজিশন ঠিক রাখুন।
- প্রচুর পানি পান করুন ও পুষ্টিকর খাবার খান।
- চাইলে স্তন্যপান পাম্প ব্যবহার করুন।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
৬ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুর খাবারের ক্ষেত্রে যা অবশ্যই মনে রাখবেন
মায়ের বুকে দুধ আসে না কেন
দুধ না আসার মূল কারণ হতে পারে শারীরিক, মানসিক কিংবা হরমোনজনিত।
সম্ভাব্য কারণ:
- অপুষ্টি বা শরীরে আয়রন/ক্যালসিয়ামের ঘাটতি
- স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা বা ঘুমের অভাব
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (যেমন: থাইরয়েড সমস্যা)
- সন্তান সঠিকভাবে বুকে না চেপে ধরলে
- দীর্ঘ সময় শিশুকে স্তন্যপান না করানো
বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন
দুধ তৈরি ও প্রবাহ ঠিক রাখতে হলে নিয়মিত শিশুকে দুধ খাওয়ানো জরুরি।
দুধ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ:
- স্তন্যপান বন্ধ করে দেওয়া
- পর্যাপ্ত তরল না খাওয়া
- ধূমপান, কফি বা ভেষজ ওষুধের প্রভাব
- বারবার ফর্মুলা দেওয়া
বাচ্চা বুকের দুধ না পেলে করণীয়
যদি দুধ না আসে বা কমে যায়, শিশুর পুষ্টির জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে।
করণীয়:
- চিকিৎসকের পরামর্শে ফর্মুলা দুধ দিন
- দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করুন
- মায়ের খাদ্য ও বিশ্রামে মনোযোগ দিন
- বুকের দুধ পাম্প করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির খাবার
সঠিক খাবার খেলে দুধের পরিমাণ ও গুণমান বাড়ে।
খাবারসমূহ:
- লাউ ও লাউয়ের তরকারি: দুধ বাড়াতে সাহায্য করে
- মেথি: হরমোন সক্রিয় রাখে
- গুড় ও খেজুর: রক্ত বৃদ্ধি করে
- ছোলা ও দুধ: প্রোটিন সরবরাহ করে
- তাহারি/সুপজাতীয় খাবার: সহজে হজম হয়, দুধ বাড়ে
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে
প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায়
ডেলিভারির পর মায়ের শরীর দুর্বল থাকে, সঠিক যত্ন ও খাদ্য জরুরি।
উপায়:
- প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম
- সন্তানকে প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পর বুকে দেওয়া
- বুক ম্যাসাজ ও হট কম্প্রেস ব্যবহার
- মেথি, কালোজিরা, দুধ, গুড় খাওয়া
- মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা
বুকের দুধ না আসার কারণ
মায়ের শরীর, পরিবেশ ও আচরণ সবই দুধ উৎপাদনে প্রভাব ফেলে।
মূল কারণগুলো:
- শিশুর সঠিক ল্যাচ না হওয়া
- মানসিক চাপ বা postpartum depression
- খাদ্য ও পানি গ্রহণে অনিয়ম
- হরমোনের সমস্যা বা আগে থেকে কোনো অসুস্থতা
কী করবেন না:
- শিশুকে শিগগিরই ফর্মুলা দুধে অভ্যস্ত করে ফেলবেন না (ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া)
- স্তনে ব্যথা বা ফাটল হলে অবহেলা করবেন না
- পানি, মধু বা অন্য কিছু প্রথম ৬ মাসে শিশুকে দেবেন না
মনে রাখবেন:
প্রথম দিকে দুধ না এলে হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন। অনেক মায়ের ক্ষেত্রেই ২–৫ দিনের মধ্যে নিয়মিত দুধ আসতে শুরু করে।
আপনি মায়ের দুধ দিতে পারছেন মানেই আপনি একটি শক্তিশালী, ভালোবাসায় ভরা মা। সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না, কারণ আপনার সুস্থতা মানেই শিশুর সুস্থতা।