শীতে কি কি রোগ হয়, শীতকালে হতে পারে যেসব রোগব্যাধি, কারন ও প্রতিকার, ঋতু পরিবর্তন জনিত রোগ ব্যাধি ৭ম শ্রেণি, শীতকালের সুবিধা ও অসুবিধা, শীতকালীন জ্বর, শীতে করণীয়, শীতকালীন ফুল, শরৎ কালে কি কি রোগ হয়
ঋতু পরিবর্তন জনিত রোগ ব্যাধি ৭ম শ্রেণি, গ্রীষ্মকালে কি কি রোগ হয়, বর্ষাকালে কি কি রোগ হয়, শরৎ কালে কি কি রোগ হয়, হেমন্ত কালে কি কি রোগ হয়, বসন্ত কালে কি কি রোগ হয়, শীতকালের সুবিধা ও অসুবিধা, শীতকালীন জ্বর
গরমকালের মত শীতকালেও নানান রোগব্যাধি হতে পারে। ভিন্ন ঋতুর থাকে ভিন্ন ধরন। পিঠার সমরহ, হরেক রকমের নতুন সবজি আর লেপ কম্বলে মুড়ে থাকা আরামদায়ক শীতেও তাই থাকতে হবে বাড়তি যত্নে। শীতে সাধারণত ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায় যেমন সর্দিকাশি, অ্যাজমা, জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জি ইত্যাদি। কোল্ড অ্যালার্জি ঠিক সময়ে সনাক্ত করা না গেলে তা নিউমোনিয়াতেও রূপ নিতে পারে।
শীতে সুস্থতায় যা করবেন আর যা এড়িয়ে চলবেন
শীতকালে হতে পারে যেসব রোগব্যাধি
মশাবাহিত রোগ
শীতকালে অনেক স্থানে মশার প্রকোপ বাড়ে ফলে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু রোগ সহ নানা জ্বরের প্রকোপ দেখা যায়। ডেঙ্গু বর্ষায় বেশি হলেও শীতকালেও এটির বিস্তার দেখা যায়। তাই মশার কামড়ে থাকতে হবে সতর্ক।
জ্বর
শীতের শুরুতে আবহাওয়ার পরিবর্তনে অনেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না তাই জ্বর হয়ে থাকে। আর তাই শীতেরশুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হালকা কুসুম গরম পানিতে গোছল বা হাতমুখ ধুতে হবে।
পাতলা পায়খানা
ঠাণ্ডার কারণে শিশুদের ও বড়দেরও পাতলা পায়খানা হতে পারে বিশেষ করে যখন বেশি ঠাণ্ডা পড়ে তখন এর প্রকোপ বাড়ে। এই সমস্যা এড়াতে বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে আর গরম কাপড়ের পাশাপাশি সবসময় হাতমোজা ও মোজা পরে থাকতে হবে।
শুষ্ক ত্বক
শীতে শুষ্কতার কারণে চামড়ার শুষ্ক হয়ে ওঠে। এই সমস্যা এড়াতে নিয়মিতভাবে ভাবে লোশন বা অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডায়াবেটিক ও ক্রনিক রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি
যাদের ডায়াবেটিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে শীতে তাদের জটিলতা আরো বাড়তে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রার মতো সমস্যাও হতে পারে।এজন্য এই রোগীদের এই সময়ে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত।
শীতের মৌসুমে কিছু নির্দিষ্ট অসুখের প্রকোপ বাড়তে পারে, এবং এসব অসুখ থেকে রক্ষা পেতে কিছু সতর্কতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন। ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ শীতকালে কমন রোগগুলোর পরামর্শ দিয়েছেন। এখানে শীতকালে সাধারণ কিছু রোগ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
সর্দি-কাশি-জ্বর
লক্ষণ:
- নাকে ও গলায় অস্বস্তি
- হাঁচি, নাক দিয়ে পানি ঝরা
- মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, জ্বর
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
- রোগীর ব্যবহৃত রুমাল বা টিস্যু আলাদা রাখুন।
- হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখে রুমাল ব্যবহার করুন।
- পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকুন।
- তাজা ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন।
- নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।
নিউমোনিয়া
লক্ষণ:
- শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
- শিশুর সঠিক যত্ন নিন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
- শীতের জন্য উপযুক্ত কাপড় পরান।
- নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- অসুস্থ লোকের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
অ্যাজমা
লক্ষণ:
- শ্বাসকষ্ট, কাশি, অ্যালার্জি
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
- পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরিধান করুন।
- ঘরের বাতাস পর্যাপ্ত রাখতে চেষ্টা করুন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলার বা ওষুধ ব্যবহার করুন।
চর্মরোগ
লক্ষণ:
- শুষ্ক ত্বক, চুলকানি, একজিমা, খুশকি
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
- অলিভ অয়েল বা লুব্রিকেন্টজাতীয় উপাদান ব্যবহার করুন।
- ত্বক ও চুলের নিয়মিত যত্ন নিন।
- গরম পানি দিয়ে গোসল করার পর ত্বক ময়েশ্চারাইজ করুন।
নাক-কান-গলার অসুখ
লক্ষণ:
- নাকের সাইনাসে ইনফেকশন, গলা ব্যথা
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
- ধূমপান ও দূষিত পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত গরম পানির গারগল করুন।
- মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন এবং গলায় গরম কাপড় ব্যবহার করুন।
বাতব্যথা
লক্ষণ:
- আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, বিশেষ করে শীতে বাড়ে
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
- গরম উত্তাপে থাকুন।
- হাত ও পায়ের মোজা পরিধান করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং অতিরিক্ত ওজন কমান।
- গরম পানি ব্যবহার করুন এবং ফিজিওথেরাপি নিতে পারেন।
সাধারণ পরামর্শ:
- শীতকালে খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনার শরীরকে শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করবে।
- প্রয়োজনীয় টিকার আওতায় থাকুন এবং ভিটামিন গ্রহণ করুন।
এই সহজ সাবধানতাগুলি আপনার শীতকালীন অসুখবিসুখের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। যদি কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
শীতকালে রোগবালাইয়ের প্রকোপ বাড়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকে, এবং এগুলোর সাথে মোকাবিলা করার জন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। শীতকালে রোগবালাই কেন বেশি হয় এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
শীতে রোগের কারণ
আর্দ্রতা পরিবর্তন:
শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। শুষ্ক বাতাস ত্বককে শুষ্ক করে তোলে, যা চর্মরোগের কারণ হতে পারে।
ধুলাবালি:
শীতকালে বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকে, যা শ্বাসতন্ত্রের রোগ যেমন সর্দি, কাশি, অ্যাজমা প্রভৃতির প্রকোপ বাড়াতে পারে।
ঠাণ্ডা লাগা:
ঠাণ্ডা লাগলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে সর্দি বা অ্যাজমা হতে পারে।
মাসল শক্ত হওয়া:
শীতকালে শরীরের মাসলগুলো শক্ত হয়ে যায়, যার ফলে শরীরের ব্যথা বেড়ে যায়।
শিশু ও বৃদ্ধদের অসুস্থতা:
শিশুদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে, এবং বৃদ্ধদের বয়সজনিত দুর্বলতা বেড়ে যায়।
কোন বয়সী রোগীরা বেশি আক্রান্ত হয়?
- শিশু ও বৃদ্ধ:
শিশুদের ইমিউন সিস্টেম কমপ্লিট হয় না এবং বৃদ্ধদের বয়সজনিত প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই এই বয়সী ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হয়।
শীতকালে সাবধানতা
প্রচুর পানি পান করুন:
শীতে সাধারণত পানি কম পান করা হয়, কিন্তু শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান জরুরি।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান:
কমলা, লেবু, জলপাই প্রভৃতি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।
শিশুদের পর্যবেক্ষণ করুন:
শিশুরা শীতকালে গরম কাপড় রাখতে ভুলে যেতে পারে। তাই তাদের দিকে নজর রাখুন এবং সঠিকভাবে গরম কাপড় পরিয়ে দিন।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
শীতকালেও নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন যাতে শরীর সুস্থ ও সক্রিয় থাকে।
গরম কাপড় পরুন:
শীতকালে গরম কাপড় পরিধান করুন, বিশেষ করে কান ও হাত ঢাকতে ভুলবেন না। গলায় মাফলার ব্যবহার করুন।
ধোঁয়া ও ধুলা এড়ান:
বাইরে ধোঁয়া বা ধুলা এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
এই সতর্কতাগুলি মেনে চললে শীতকালীন অসুখবিসুখের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। শীতকালে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়।