কৃষি একটি দেশের জন্য সাফল্যের অন্যতম স্তম্ভ।
কৃষিতে বাংলাদেশের সফলতা বিশ্বের কাছে উল্লেখ করবার মত। আমাদের একটি সুনিদ্রিষ্ট কাঠামোর প্রয়োজন যার মাধ্যমে আমরা কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করবার পাশাপাশি ভোক্তারা যেন তাদের সামর্থের মাধ্যমে পণ্য কিনতে পারেন তা নিশ্চিত করতে পারি। প্রাথমিক, কেন্দ্রীয় ও প্রান্তিক বাজারের নিয়মতান্ত্রিক সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কৃষিকে উন্নয়নের শীর্ষে নিয়ে যাওয়াটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বর্তমানে আমরা আইসিটি খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছি। আমাদের ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বার স্বপ্ন এখন শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। আমরা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছি যে আমাদের উন্নয়নের জন্য যা যা প্রয়োজন তা আমরা অর্জন করতে সক্ষম। এই লক্ষ্য অর্জনের পথে, আমাদের কৃষিখাত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। সকল উন্নয়নমূলক উদ্যোগের সাথে আমাদের কৃষকের স্বপ্ন নিয়েও আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। কৃষক থেকে ভোক্তার হাতে পণ্য পৌঁছান পর্যন্ত আমাদের বিক্ষিপ্ত পণ্য বাজারজাতকরণের বিপণন ব্যবস্থাকে একটি পরিকল্পিত প্ল্যাটফর্মে আনা প্রয়োজন। এই প্ল্যাটফর্মে কৃষকেরা তাদের পণ্য বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যমে সরাসরি পাইকারী বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে এবং প্রাথমিক মধ্যস্বত্বভোগীদের হস্তক্ষেপ এড়ায়ে ন্যায্য মূল্য পেতে সক্ষম হতে হবে। কৃষকদের জন্য প্রস্তাবিত এই মার্কেটিং সিস্টেমের বিস্তারিত এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
কৃষক ও পাইকারী বিক্রেতার জন্য একটি সহজে ব্যবহারযোগ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ বাংলা ওয়েবসাইট তৈরি করা যেতে পারে যেখানে নিবন্ধিত কৃষক ও পাইকারী বিক্রেতার তালিকা দেয়া থাকবে। ওয়েবসাইট থেকে কৃষকরা তাদের পণ্যর বিজ্ঞাপন দিতে পারবে এবং পাইকারী বিক্রেতারা বর্তমান বাজার মূল্য উপর ভিত্তি করে পণ্য ক্রয় করতে পারবে এবং আর কোন মধ্য কারবারি সেখানে অংশগ্রহন করতে পারবে না।
ওয়েবসাইটটিতে কৃষকেরা ফসল কাটার আগে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে পারবে ফলে কৃষক ও পাইকারী বিক্রেতারা পণ্য সংরক্ষনের সময়কাল ও খরচ উভয়ই কমিয়ে আনাতে পারবে এবং কৃষকরা সরাসরি ফসল কাটার পর বিক্রয় করতে পারবে। ওয়েবসাইটে যেয়ে কৃষকরা বর্তমান সময়ের উপযোগী ফসল সম্পর্কে এবং পাইকারি বিক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনে সক্ষম হবে। এছাড়াও কৃষক ও পাইকারী বিক্রেতা উভয়ই আপডেট থাকতে পারবে দৈনিক বাজারদর ও পরিবহনের লভ্যতা সম্পর্কে। দৈনিক বাজারদর এর আপডেট পেতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট লিঙ্ক করা যেতে পারে এই ওয়েবসাইটের সাথে। কৃষকরা অনেকসময় বাংলা বুঝতে নাও পারেন সে কারণে ওয়েবসাইটটি আরো প্রতীক ভিত্তিক এবং সহজতর হওয়া উচিত। ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষেত্রে, পাইকারী বিক্রেতারা একই স্থানের বিভিন্ন ক্ষুদ্র কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ও একই সময়ে তাদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
স্থানিও পর্যায়ে ডিজিটাল তথ্য কেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে যেই তথ্য কেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় যুবকদের সাহায্য নিয়ে অথবা উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় কৃষকদেরকে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়া এবং ওয়েবসাইট ব্রাউজিং প্রক্রিয়ার নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।
একটি বড় কম্পিউটার স্ক্রিন তথ্য কেন্দ্রে সরবরাহ করা যেতে পারে যাতে কৃষকরা সহজে বর্তমান পণ্যের চাহিদা জানতে পারে, বাজারের দৈনিক দরের আপডেট দেখতে পারে এবং সহজে পণ্য বাজারজাত করতে পারে। দৈনিক বাজারদর কৃষকদের জানা জরুরী যাতে তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হয় এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের এড়ায়ে পাইকারী বিক্রেতার কাছে সরাসরি পণ্য বিক্রি করতে পারেন।
একটি নিয়মতান্ত্রিক কাঠামো আমাদের কৃষি ব্যবস্থার জন্য আবশ্যকীয় যা কৃষকদের জীবন কাঠামো সহজ করবে এবং তাদেরকে একটি নির্ভরযোগ্য প্রকল্পের ভিতর অন্তর্ভুক্ত করবে। যেহেতু এই পুরো প্রক্রিয়াটি প্রযুক্তি নির্ভর তাই প্রাথমিকভাবে চাষীরা এই প্রক্রিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন। কৃষকদেরও বুঝানো উচিৎ যে ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য সময় উপযোগী প্রযুক্তি তাদের গ্রহন করা উচিৎ। এলাকার যুব সম্প্রদায় এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে। স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় ও জাতীয় পর্যায় থেকে স্থানীয় পর্যায় উভয়ভাবেই সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা উচিত। এই সম্পর্কিত বিষয়ে আরও বিস্তারিত ও সহজবোধ্য ধারনা পেতে কৃষকদের সাথে মিটিং অথবা প্রোগ্রাম পরিচালনা করা যেতে পারে।
প্রতিটি কৃষক তাদের প্রতিটি ঘামের ফোঁটার মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে না তা নিশ্চিত করাবার সময় এখনই।