সাইকেল চালানোর উপকারিতা ও অপকারিতা, সাইকেল চালানোর ক্ষতিকর দিক, সাইকেল চালালে কি লম্বা হওয়া যায়, সাইকেল চালানোর নিয়ম, মেয়েদের সাইকেল চালানোর অপকারিতা, সাইকেল চালালে কি ওজন কমে।
ত্বকে বয়সের ছাপ পরার কারন জেনে নিন! চামড়া ভাজ পড়ার কারণ
দুই চাকার সাইকেল চালিয়ে আপনি যেমন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন ঠিক তেমনই আপনার মনও থাকে প্রফুল্ল। যানজটের এই ব্যাস্ত শহরে কিছু দূরত্ব পার হতেই চার চাকার গাড়ির সহায়তা না নিয়ে সাইকেলের সাহায্য নিন। এতে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধে আপনি সহায়তা করছেন ঠিক তেমনই আপনি নিজের শরীরকে রাখছেন সতেজ।
সাইকেল চালানো হতে পারে আপনার অবসর বিনোদনেরও একটি মাধ্যম। অন্যান্য যানের তুলনায় আপনি অল্প খরচেই এই যানটি কিনতে পারেন এবং এই যানটি রাখবার জন্যও আপনাকে খুব একটা জায়গার চিন্তা করতে হয় না।
দৈনিক ৪৫ থেকে ৬০ মিনিটের মত সাইক্লিং করা উচিত।
সাইকেল চালানোর উপকারিতা
সাইকেল চালানো আপনাকে যেভাবে উপকৃত করছে তা এখানে উল্লেখ করা হল-
মানসিক চাপ কমায় ও মন প্রফুল্ল রাখে
মানসিক স্বাস্থ্য খুবই গুরত্তপুর্ন যা সাইকেল চালানোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা যায়। মানসিক চাপ ও অস্থিরতা নিয়মিত সাইকেল চালানোর মাধ্যমে কমানো যেতে পারে। একসাথে কয়েকজন মিলে সাইক্লিং করলে তা আরও উপভোগ্য হয়।
শরীরের চর্বির মাত্রা ও ওজন কমে
ওজন কমানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই ক্যালোরি বার্ন করতে হবে। আর সাইক্লিং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর একটি ভালো মাধ্যম। পরিমিত খাদ্যাভাস আর সাথে নিয়মিত সাইক্লিং আপনাকে একটি সুস্থ শরীর ধরে রাখতে সাহায্য করবে। গবেষণায় দেখা যায়, সাইকেল চালিয়ে প্রায় ৪০০ থেকে ১০০০ ক্যালরি প্রতি ঘন্টায় পোড়ানো যায়।
চেহারায় বয়সের ছাপ দেরিতে আসে
নিয়মিত অনুশীলন এর মতই নিয়মিত সাইক্লিং আপনার শরীর ও মনকে সতেজ রাখে। আপনার দৈনন্দিন কাজে ছন্দ ফিরে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে সাইক্লিং অনুশীলন ত্বকের কোষগুলিতে আরও কার্যকরভাবে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর টক্সিনগুলি বেড় করে দেয়। শরীরে কোলাজেন উৎপাদনের অনুকুল পরিবেশ তৈরি করে যা বয়সের ছাপ কমিয়ে দেয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
সাইক্লিং শরীরে নানান রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা অনুসারে, যারা সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে সাইক্লিং করেন তাদের অসুস্থতার দিন অন্যান্যদের তুলনায় অর্ধেক কমে যায়।
মেধা শক্তি বৃদ্ধি করে
মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে সাইক্লিং। গবেষণায় দেখা গেছে সাইক্লিংঅনুশীলন মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় আর অক্সিজেন সরবরাহ করে যা আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য সহায়ক।
ফুসফুস ভাল রাখে
সাইক্লিং ফুসফুস ভালো রাখে ও ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে একজন সাইকেল চালককে একজন গাড়ি চালকের তুলনায় বিপজ্জনক ধোঁয়ার মুখোমুখি কম হতে হয়।
পেশী গঠন করে
সাইক্লিং শুধু ওজন কমায় না বরং পেশী সুগঠিত করে। সাইকেল চালানোর সময় প্রাথমিকভাবে শরীরের নিচের অংশ বিশেষ করে পায়ের পেশীগুলির কাজ করে ও সক্রিয় হয় এবং একইসাথে আপনার বাহুগুলোেও শক্তিশালী করে। আপনি প্রতিবারই যখন সাইকেলের পেডেলে চাপ দিচ্ছেন আপনার পায়ের কয়েকটি পেশী সক্রিয় হয়ে উঠছে।
ক্যানসার, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
সাইক্লিং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বাড়ায়, দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং ওজন কমায় যা হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মত বড় রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি গবেষণায় ২৬০,০০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির উপর অধ্যয়ন করে দেখা গেছে যে সাইকেল চালানো হৃদরোগ বা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেকের মত কমিয়ে আনে।
সময় বাঁচায়
সাইক্লিং করলে আপনাকে অল্প দূরত্ব পার হতে গাড়ি নিয়ে বিরক্ত হয়ে যানজট এর রাস্তা পার হতে হবে না। খুব সহজেই কাছে ধারে কোথাও সাইকেল চালিয়ে চলে যেতে পারবেন। দীর্ঘ সময় বাসের জন্য লাইনে দারিয়ে সময় খরচ করতে হবে না। শরীর ভাল রাখবার পাশা পাশি আপনার মূল্যবান সময়টুকুও আপনি রক্ষা করতে পারবেন।
ভাল ঘুম হয়
যাদের ভালো ঘুম হয়না, ঘুমের সমস্যা তাদের থেকে ভালো আর কেই বা বলতে পারবে। বয়স বারবার সাথে সাথে ঘুমের সমস্যাও বাড়তে থাকে। সাইক্লিং অনুশীলন মানসিক চাপ কমায়, মন প্রশান্ত রাখে আর ক্যালরি বার্ন করে যা ভাল ঘুমের জন্য সহায়ক।
সাইকেল চালানো এবং শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধি: একটি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ
শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে অনেক অভিভাবকই নানা ধরনের চেষ্টা করে থাকেন। সাইকেল চালানো, ঝুলে থাকা ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা প্রায়শই শোনা যায়। তবে বাস্তবতা কী? বিজ্ঞান কী বলে?
পেশি এবং হাড়ের উন্নয়ন: সাইকেল চালানো শরীরের নিচের অংশের পেশি এবং হাড়ের জন্য ভালো ব্যায়াম। এটি বিশেষভাবে পা, হাঁটু, এবং কুলের পেশি ও হাড়কে শক্তিশালী করে। নিয়মিত সাইকেল চালানোর মাধ্যমে পেশি টোনিং হয় এবং হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।
সার্কুলেশন উন্নয়ন: সাইকেল চালানো রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা হাড়ের জন্য উপকারী হতে পারে। ভালো রক্ত সঞ্চালন হাড়ের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সাইকেল চালালে কি লম্বা হওয়া যায়
উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা:
সাইকেল চালানোর মাধ্যমে শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধি কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে, তবে এটি একমাত্র উপায় নয়। উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে পুষ্টি, হরমোন এবং জিনগত প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সাইকেল চালানোর পরামর্শ
রুটিন: প্রতিদিন ৩০ মিনিট সাইকেল চালানোর অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো। এটি শরীরের পেশি এবং হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
সঠিক পুষ্টি: সাইকেল চালানোর সাথে সাথে শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া উচিত। দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ফলমূল, এবং শাকসবজি শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।
ভালো ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর বৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়ক।
অন্যান্য শরীরচর্চার পরামর্শ
ঝুলে থাকা: ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য শিশুকে ঝুলতে দেওয়া যেতে পারে। এটি মেরুদণ্ডের জন্য ভালো হতে পারে এবং উন্নত শারীরিক গঠন করতে সাহায্য করতে পারে।
দৌড়ঝাঁপ: শিশুকে নিয়মিত দৌড়ঝাঁপের সুযোগ করে দিন। এভাবে শারীরিক সক্ষমতা এবং হাড়ের গঠন ভালো থাকবে।
বাইরের খেলা: শিশুকে বাইরে খেলাধুলা করতে দিন। এতে শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে এবং উন্নত পেশি গঠনে সহায়তা হবে।
কিছু সতর্কতা
অতিরিক্ত চাপ: শিশুর ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করবেন না। উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য কিছু কাজ করলেই যে কোনো শিশুর উচ্চতা বাড়বে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
পুষ্টি নিশ্চিত করুন: সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করা জরুরি। শিশুর খাবারে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন।
অতএব, সাইকেল চালানো শরীরের কিছু অংশের পেশি ও হাড়ের জন্য ভালো ব্যায়াম হতে পারে, তবে এটি একমাত্র উপায় নয়। উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সঠিক পুষ্টি, শারীরিক কার্যক্রম, এবং জিনগত কারণের সম্মিলিত প্রভাব প্রয়োজন।