বিসিএস প্রস্তুতি শূন্য থেকে যেভাবে শুরু করবেন
বিসিএস প্রিলিতে পাস করা খুব সহজও নয়, আবার খুব কঠিনও নয়। আপনি যদি পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যান তাহলে হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বিসিএস প্রিলিতে পাসের জন্য পরিকল্পনার সাথে কিছু টেকনিক জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যারা প্রথমবারের মতো বিসিএস দেবেন তারা কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন তা হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন। হয়তো ভাবছেন, ঠিক কোথা থেকে কীভাবে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করবেন? এত কম সময়ে কি ভালো করা সম্ভব?
প্রকৃতপক্ষে, হাতে যে পরিমাণ সময় আছে, তা কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনা করে পড়লে, ভালো করা সম্ভব। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে শূন্য থেকে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করবেন—
শূন্য থেকে বিসিএস প্রস্তুতির নিনজা টেকনিক
- প্রথমে বিসিএস প্রিলির সিলেবাস এবং বিগত সালের প্রশ্নগুলো দেখুন। বিসিএসে কী ধরনের প্রশ্ন হয় ধারণা পেয়ে যাবেন এবং বিগত সালের প্রশ্ন থেকে অনেক কমনও পাবেন । বিগত সালের প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। হাতে বেশি সময় না থাকলে ৩৫তম-৪৪তম বিসিএস প্রিলি পর্যন্ত ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। কারণ এগুলো বিসিএস প্রিলির নতুন সিলেবাস অনুযায়ী হয়েছে। এর জন্য প্রফেসর’স বিসিএস প্রশ্ন ব্যাংক বা ওরাকল প্রিলি প্রশ্ন ব্যাংক অথবা অ্যাসিওরেন্স প্রিলি প্রশ্ন ব্যাংক থেকে পড়তে পারেন। তাছাড়া জব সল্যুশন থাকলে সেখান থেকেও পড়ে নিতে পারেন।
- এরপর ‘বিসিএস প্রিলিমিনারি অ্যানালাইসিস’ বইটির এ টু জেড ভালোভাবে বুঝে বুঝে শেষ করুন অন্তত দুইবার। এই বইটি শেষ করলে বিসিএস প্রিলি সম্পর্কে আপনার ধারনা পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিসিএস প্রিলি নিয়ে আপনার ভয় থাকলে তা কেটে যাবে।
- এরপর যেকোনো ভালো সিরিজের (যেমন এমপিথ্রি/প্রফেসর’স/অ্যাসিওরেন্স/ওরাকল) প্রিলির আলাদা বিষয়ের সিলেবাসের সাথে মিল রেখে টপিকগুলো পড়ুন। গুরুত্বপূর্ণ টপিক বা অধ্যায়ের ওপর বেশি জোর দিন। মনে রাখবেন, প্রতি বিসিএস প্রিলিতে কিন্তু প্রিলির সিলেবাসের সব টপিক বা অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে না।
- বিগত সালের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা থেকেপ্রশ্ন রিপিট হয় তাই জব সল্যুশন পড়ুন। এখানে বিগত সালের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার ব্যাখ্যাসহ সমাধান পাবেন। এ ক্ষেত্রে আপনি প্রফেসর’স জব সল্যুশন বা ওরাকল জব সল্যুশন যেকোনো একটি ফলো করতে পারেন।
- বিসিএসের ভালো মানের একটি বা দুটি মডেল টেস্ট (বিসিএস রিয়াল মডেল টেস্ট বইটি ও সাথে অন্য যেকোনো ভালো মানের মডেল টেস্ট বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন) নিয়ে সময় ধরে পরীক্ষা দিন। তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন, সেই বিষয়টিতে জোর দিন।
- এছাড়া ৪র্থ-১০ম শ্রেণির ম্যাথগুলো শেষ করুন এবং ৯ম-১০ম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ, বাংলা ব্যাকরণ বইটি সাথে রাখবেন। দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ুন। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই বা পড়ার সুযোগ নেই, তারা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন। পরীক্ষার আগমুহূর্তে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি বই পড়তে পারেন।
বিসিএস প্রস্তুতির আদ্যোপান্ত
ভালো ভাবে সিলেবাস দেখে নিন
প্রস্তুতির পূর্বেই বিসিএস এর সিলেবাস প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো ভাবে পড়া জরুরী। সিলেবাসের বাইরে সাধারনত কোন প্রশ্ন আসে না। সিলেবাস দেখে কোন বিষয়ে আপনি পারদর্শী আর কোন বিষয়ে দূর্বল তা বুঝুন।
বেশি বেশি এমসিকিউ পরুন
বেশি বেশি এমসিকিউ পড়ুন। ভালো মানের ২-৩টি মডেল টেস্ট বই কিনে এমসিকিউগুলো পড়ে ফেলুন।
মডেল টেস্ট দিন
কারণ ভালো মানের মডেল টেস্টগুলোয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো থাকে যা থেকে পরীক্ষায় অনেক কমন পাওয়া যায়। সে জন্য আপনি ‘বিসিএস রিয়াল মডেল টেস্ট’, ‘প্রফেসর’স মডেল টেস্ট’ বা ভালো মানের অন্য যেকোনো মডেল টেস্ট পড়তে পারেন। তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন তা ভালোভাবে শেষ করুন।
ভালো সিরিজের বইগুলো পরুন
বিসিএস প্রিলির যেকোনো ভালো সিরিজের বইগুলো পড়ুন এবং বিসিএস প্রিলিমিনারি অ্যানালাইসিস বইটি ভালোভাবে শেষ করুন। এছাড়া ৪র্থ-১০ম শ্রেণির ম্যাথ ও ৯ম-১০ম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ, বাংলা ব্যাকরণ বইটি পড়ুন। দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ুন। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই তারা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন। আর পরীক্ষার কিছুদিন আগে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি বই পড়তে পারেন।
বিগত বছরের প্রশ্ন সলভ করুন
বিসিএস এর ইতিহাসে প্রতিবারই পূর্বের প্রশ্ন থেকে কিছু রিপিট হয়। তাই পূর্বের প্রশ্নগুলো সলভ করুন। যেকোন একটা বই কিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বা ২য় বর্ষেই ফাঁকে ফাঁকেই পড়ে ফেলুন।
সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি পড়ুন
বিসিএস পরীক্ষায় প্রতিযোগী ও প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই আগের টেকনিক অবলম্ব করে সময় নিয়ে পড়ুন। বেশি বেশি পড়ুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বেশি জোর দিন যেন পরীক্ষার হলে গেলে বিভ্রান্ত না হন।
অনার্স থেকে শুরু করে দিন বিসিএস প্রস্তুতি
আপনার যদি ইচ্ছা থাকে বিসিএস দেবার, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। শুধুমাত্র বিসিএসকে টার্গেট রেখে সিলেবাস অনুযায়ী নিয়মিত পড়াশুনা করতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন অবস্থায় বিসিএস সিলেবাস ও বিসিএস পরীক্ষার পদ্ধতির সকল তথ্যাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে দেখে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করা উচিত।
বিশ্ববিদালয়ের ৩য় বর্ষে কিছু বিখ্যাত বই পড়ে ফেলুন যেমন “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”, “লালনীল দীপাবলি” এই বইগুলো থেকে বিসিএসে কিছু প্রশ্ন থাকে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কিত বই, মুক্তিযুদ্ধের উপর বইগুলো পড়ে ফেলা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষ থেকে বিসিএস এর সিলেবাস অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ের জন্য বিষয়ভিত্তিক বই পড়া শুরু করা উচিত।
প্রতিদিন পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করুন
পত্রিকার লিখা পড়লে বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষায় অনেক কাজে দিবে। তাছাড়া বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে প্রশ্ন আসে। এই ২ বিষয়ের প্রশ্নগুলো সাধারনত পত্রিকা থেকেই করেন প্রশ্ন কর্তারা। তাই নিয়মিত পত্রিকা পড়লে এগুলো থেকে সহজেই উত্তর করা যাবে।
সবশেষে মনে রাখবেন, পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি ১ ঘণ্টা বেশি পড়া মানে ১ ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে।