বাবা শব্দটা যে কতটা আবেগের তা বাবাকে হারানোর পর বুঝেছি। বাবা মায়েরা মানব নয় তারা মহামানব। এই মহামানবেরা তাদের সকল সুখ আর আনন্দ ত্যাগ করে আমাদেরকে আনাবিল ভালবাসায় গড়ে তোলে। বাবার গায়ের একটা সুন্দর গন্ধ আছে যা এখন অনেক মিস করি। বাবা দুপুর বেলা যখন বাসায় খেতে আসতেন তখন আমাদের বোনদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হত যে কে আগে দরজা খুলবে। সিঁড়ি বেয়ে বাবা যখন উঠে আসতেন তখন তার স্যান্ডেল জোড়ার তৈরি শব্দ আমাদের মনের ভেতর গেঁথে ছিল শক্ত ভাবে। এখনও এই শব্দের সম্রুপ শব্দ কানে আসলে কিছু মুহূর্তের জন্য বাস্তবতা ভুলে যাই। কোন কোন সময় দুই বোন একসাথে যেয়ে দরজার খিল ধরে বসে থাকতাম। আর ওপাশ থেকে বাবা ডাক পারতেন।
মাঝে মাঝে মায়ের ঝাড়ি অথবা পিটান খেয়ে দুপুরে খাওয়া বন্ধ করে দিতাম কিন্তু বাসায় এসে বাবা শুধু বলতেন তুই না খেলে আমিও কিন্তু খাবো না। তখন সব কিছু ভুলে যেয়ে খেতে বসতাম। এখন আমার এই অভিমান ভাঙানোর কেউ নেই, সকল রাগ অভিমান নিয়ে নিজেই খেতে বসে যাই। মা এখন আর ছোট বেলার মত পিটান দেয় না অথবা ঝাড়িও দেয় না। বরং আমি না খেলে মা চিন্তা করবে তাই নিজ দায়িত্ব নিয়ে খেয়ে নেই। আমরা সাধারণত দুপুরে বাবা আসবার আগে খেতাম না। বাবা খাবার পরে খেতাম। বাবা মাঝে মাঝে খাবার খেয়ে অতিরিক্ত খাবার তার প্লেটে রেখে দিতেন। ঐ অংশুটুকু অমৃত ছিল। দুপুরে খাবার পরে আমরা পিঠাপিঠি দুই বোন বাবার দুই হাতের উপর শুয়ে পরতাম আর বাবা গল্প বলতেন। বাবার গল্প প্রায়সময় শেষ হত এভাবে- “ মানুষটি জঙ্গলে হাটছে। সে হাটতে থাকুক ততক্ষণ আমরা ঘুমাই”। আমরাও বাবার এই কথা শুনে ঘুমিয়ে পরতাম কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখতাম বাবা ততক্ষণে কাজে চলে গেছেন।
আমার বাবা কখনও সঞ্চয়ের কথা মাথায় রাখতেন না। যা নিয়ে আমার মায়ের অনেক অভিযোগ ছিল। বাবা যে এ ব্যাপারেও মহান ছিলেন তা ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি। যে কোন মৌসুমি ফল ঋতুর শুরুতে বাড়তি দামে বিক্রি হয়। তখনকার সময় মেডিসিন ফল বলে কিছু ছিল না। যাই হোক তিনি ঋতুর শুরুতেই ফল নিয়ে হাজির হতেন বাসায়। বাবা পুরো মৌসুম জুরেই আমাদেরকে বাজারের সবচেয়ে ভালো ফলটাই খাওয়াতেন। শুধু ফল নয় তিনি যখন বাজার করতেন তখন বাজারের সেরা এবং বাসার সকলের প্রিয় খাবার ব্যাগ ভর্তি করে আনতেন। আমার বাবাকে তার সন্তানদের বিষয়ে কখনই কিপ্টামো করতে দেখিনি। হ্যাঁ, তবে তার নিজের বিষয়ে দেখেছি। তিনি প্রতি বছর তার নিজের জন্য একটা নতুন শার্ট ও কিনতেন কিনা আমার মনে পরে না। একদিন মা বাধ্য হয়ে নিজেই বাবার জন্য দুটো শার্ট কিনে এনেছিলেন। ঈদেও কখনও আমার বাবা মা কাওকে নতুন পোশাক কিনতে দেখি নাই। কিন্তু যত খরচই হোক বাজারের শ্রেষ্ঠ পোশাকটাই বাবা আমাদের কিনে দিতেন।
বাবা কখনও আমাদের পড়াশোনার ব্যাপারে কোন খোঁজ নিতেন না। তবে বৎসরের চূড়ান্ত ফলাফল তিনি অবশ্যই শুনতেন। ভালো করলে অনেক খুশি হতেন কিন্তু খারাপ করলে কোনদিনও রাগ করতেন না। আমার মনে আছে যখন আমি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই তখন বাবা অনেক অনেক খুশি হয়েছিলেন। তার দোকানের চারিপাশের সকলকে তিনি মিষ্টি খাইয়ে ছিলেন। সন্তানের সাফল্যে তার গর্ব তখন দেখবার মত ছিল। এখন তাকে আমি আর কোন খুশির খবর দিতে পারি না। তার ঐ আনন্দ আর কখনই দেখতে পারব না।
ছোট বেলায় সন্ধার সময় আমাদের এলাকায় নিয়ম করে কারেন্ট চলে যেত। তখন বাবা সাইকেল নিয়ে আসতেন বাসার নিচে। আর আমাদের পিঠাপিঠি দুই বোনের একজনকে সামনে বসায়ে আর এক জনকে পেছনে বসায়ে বাজারের দিক নিয়ে যেতেন। বাজার থেকে কিনে দিতেন অনেক মজার মজার খাবার। ঐ সময়টায় বাবাকে যে কত ভালবাসতাম। যখন ঝড় শুরু হত আর বাবা বাহিরে থাকতেন তখন আল্লাহর কাছে বাবার জন্য দোয়া করতাম যাতে তিনি সুস্থ ভাবে বাসায় ফিরে আসেন। বাবার জন্য অল্পতেই অনেক চিন্তা করতাম আর তার আসতে দেরি হলে তার দোকানেও চলে যেতাম প্রায়ই।
আমাদের ভাইবোনদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। আমরাই তাদের স্বপ্ন ছিলাম। আমরাই তাদের ভবিষ্যৎ ছিলাম। তারা নিজেদের কথা কখনও ভাবেননি। ভেবেছেন শুধুই আমাদের কথা। অথচ কি স্বার্থপর আমি। বড় হবার পর কি যেন হল। কত অভিযোগ বাবার প্রতি। এই অভিযোগের ভার নিয়ে বাবা চলে গেলেন। এখন অনুতাপ করা ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই। মাফ চাইতে না পারার যে কি কষ্ট তা ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। এখনও বাবার কাছাকাছি চেহারার কাউকে দেখলে দ্বিতীয়বার ভালো ভাবে খেয়াল করি আর হতাশ হই। হ্যাঁ, তবে প্রায়ই স্বপ্নে বাবাকে দেখি আর সেখানে তাকে যেকোনো ভাবেই জীবিত অবস্থায় খুঁজতে থাকি। আমার স্বপ্নে তিনি আসেন আর তাকে সেখানে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে অনেক শান্ত হয়ে যায় মনটা। কিন্তু ঘুম ভেঙে বাস্তবতায় আসলে তাকে আবার হারিয়ে ফেলি আর মনটাও অশান্ত হয়ে পরে।
লেখক- সুরাইয়া ইয়াসমিন
বাবা হারানোর স্ট্যাটাস, বাবা নিয়ে উক্তি, আমার বাবা, বাবা মানে পৃথিবী, বাবা নিয়ে স্ট্যাটাস, বাবাকে মিস করা নিয়ে স্ট্যাটাস, বাবা ছাড়া জীবন, বাবা মানে বটবৃক্ষ, আমার বাবা অনুচ্ছেদ, আমার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা, আমার বাবা কবিতা, নাটক আমার বাবা, বাবা আমার এক পৃথিবী বাবা আমার সব, আমার বাবার নাম কি, বাবা তুমি নেই বলে আজ আমি, বাবা তোমাকে
আরও পড়ুন-
সুন্দর ত্বক পেতে যা করবেন! উজ্জ্বল ত্বকের ১০টি জাদুকরী প্রাকৃতিক উপাদান
ওজন কমাতে আদার শরবত (এক সপ্তাহেই ওজন কমিয়ে ফেলুন)
ওজন কমাতে কৌশলগত হউন! যা ডায়েটের তুলনায় সহজ!
মুখের ব্রন ও বড় ছিদ্র থেকে বাসায় বসে পরিত্রাণ পান
৬ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুর খাবারের ক্ষেত্রে যা অবশ্যই মনে রাখবেন
গর্ভবতী মায়ের যে বিষয় গুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে
সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর যত উপকারিতা
ত্বকের কালো দাগ দূর করতে ঘরোয়া টিপস!
ত্বকে বয়সের ছাপ বা দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার কারন গুলি জেনে নিন!
অনিদ্রা দূর করার জন্য ৬ টি পরামর্শ
স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ১১টি প্রধান কারণ
শিশুদের কি টিকা দিতে হয়, শিশুর টিকা কখন দিতে হয়, রোগের নাম, টিকার নাম..