স্বাস্থ্য ও রূপ চর্চা

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – লেবুপানি কেন খাবেন ?

ভরা পেটে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা, রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, সকালে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, গরম পানিতে লেবু খাওয়ার অপকারিতা, খালি পেটে ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা, খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা ।

লেবুতে রয়েছে নানান পুষ্টি উপাদান যা শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে

লেবু খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় । এছাড়া অনেকে আচার তৈরি করে থাকেন। লেবু ছোট ফল হলেও এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণে অনেক।

লেবুর পুষ্টিগুণ

লেবুর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই অবগত, তবে এর বিভিন্ন গুণাগুণ সম্পর্কে হয়তো সকলের জানা নেই। বাজারে নানা ধরনের লেবু পাওয়া যায়, যেমন: পাতিলেবু, কমলালেবু, মোসাম্বিলেবু, গন্ধরাজ ও বাতাবিলেবু। ১০০ গ্রাম কাগজি লেবু থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত করে:

  • ভিটামিন সি: ৬৩ মিলিগ্রাম, যা আপেলের ৩২ গুণ এবং আঙুরের দ্বিগুণ।
  • ক্যালসিয়াম: ৯০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এ: ১৫ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন বি: ০.১৫ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস: ২০ মিলিগ্রাম
  • লৌহ: ০.৩ মিলিগ্রাম

টাটকা লেবুর খোসাতেও প্রচুর পুষ্টি রয়েছে। গরমের দিনে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং তা স্বস্তি দেয়।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ৮ টি ফল ও সবজি

লেবু ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল, যা দেহে সঞ্চিত হয় না, তাই শিশু-বৃদ্ধ সবাইকে প্রতিদিন ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার খেতে হবে। জ্বর, সর্দি, কাশি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় লেবু কার্যকর। লেবুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, স্কার্ভি রোগ থেকে রক্ষা করে, ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক এবং রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা বাড়ায়।

শিশুদের জন্য দৈনিক ২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আবশ্যক। এর অভাবে শিশুর দাঁত, মাড়ি ও পেশি মজবুত হয় না। অরুচি ভোগা ব্যক্তিরা খাবারে লেবু ব্যবহার করলে দ্রুত রুচি ফিরে পেতে পারেন। মাথায় খুশকি নিবারণে লেবুর অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং, প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে লেবু রাখা উচিত।

আসুন জেনে নেই অসাধারণ কিছু লেবু খাওয়ার উপকারিতা-

পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে

যারা পেটের গোলযোগে ভুগছেন তাদের জন্য লেবু অনেক উপকারী। ডায়রিয়া, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য হলে শুরুতে এক গ্লাস লেবু+লবন পানি আপনাকে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দেবে। লেবুর সঙ্গে এক চা চামচ মধু খেতে পারলে আরো ভাল।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

লেবুতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমারোহ যা শরীরে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। নিয়মিত লেবু খাদ্যতালিকায় থাকলে আমারা ক্যান্সারের হাত থেতে রক্ষা পেতে পারি।

ফুসফুসের জন্য ভাল

লেবু ফুসফুসের যত্ন নেয় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য বের করে দেয়। এছাড়া লেবু শরীরের চর্বি ও লিপিডের মাত্রা কম রাখে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

খাবারে যারা পর্জাপ্ত পটাশিয়াম গ্রহণ করে না, তারা সহজেই হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে পড়ে। লেবুতে যথেষ্ট পরিমান পটাশিয়ামরয়েছে যা হাইপার টেনশন কমাতে সাহয্য করে।

শরীরের ক্ষত সারায়

লেবুর যে কোন ভাইরাস জনিত ইনফেকশন যেমন ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর দমনে লেবু খুব কার্যকারী। এছাড়া মুত্রনালীর ক্ষত সারাতেও লেবুর গুরুত্ব রয়েছে।

মুখের দুর্গন্ধ দুর করে

মাড়ির ব্যথা, দাঁতের সমস্যা, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে লেবু। লেবুর পানি খাবার পর দাঁত ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই।

ত্বকের যত্ন নেয়

লেবু ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। লেবু ত্বক থেকে বয়সের চাপ দূর করে, চামড়ার অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে, ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করে, ব্রণ সারিয়ে তোলে, ত্বকের রং উজ্জ্বল করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে

নিয়মিত লেবুর পানি খেলে ধীরে ধীরে ওজন কমবে।

গর্ভবতী নারীদের সুস্থতায়

গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই ভালো লেবুপানি। এটা শুধু গর্ভবতীর শরীরই ভালো রাখে না বরং গর্ভের শিশুর জন্যও অনেক বেশি উপকার করে। লেবুর ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।

পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে

লেবু শরীরে এসিডিটি তৈরি করে না বরং শরীরের পিএইচ মাত্রাকে সঠিক অবস্থায় রাখে।

শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে

যাদের হালকা শ্বাসকষ্ট আছে, তারা নিয়ম করে খাবারের আগে এক চামচ লেবুর রস খেতে পারেন।

বয়সের ছাপ দূর করে

লেবুর রস মুখের বলিরেখা দূর করে। রেখাগুলোতে লেবুর রস দিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন ও ধুয়ে ফেলুন।

লেবু

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – লেবুপানি কেন খাবেন ?

সকালে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে লেবু পানি পান করা অনেক উপকারী। লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জোগান দেয়। সকালে ৪০০ মিলিলিটার পানি পান করলে বিপাকক্রিয়া বাড়ে, ফলে সারা দিনের খাদ্য হজমে সুবিধা হয়।

হজমে সাহায্য: লেবু-পানি খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়। চাইলে লেবুর খোসা চিবিয়েও উপকার পাওয়া যায়।

অবশ্যকীয় পুষ্টি: লেবু-মধু-পানি খেলে ক্ষুধা কমে, ফলে খাওয়ার পরিমাণও কমে যায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ: গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীর সারা দিন সতেজ থাকে।

তবে, লেবু-মধু-পানি পান করার ফলে শুধু ফ্যাট ক্ষয় বা বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যাওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামও অপরিহার্য।

ত্বকের জন্য উপকারী: ভিটামিন সি বলিরেখা পড়া রোধ করে এবং ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে।

মুখের যত্ন: লেবুপানি পান করার পর কুলি করে মুখ ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ অতিরিক্ত ভিটামিন সি দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা: যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তারা লেবুপানি এড়িয়ে চলবেন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

সকালে লেবু-পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, তবে এর সাথে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য।

ওজন কমাতে লেবু-পানির উপকারিতা

লেবু-পানি পানের নানামুখী উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন, বিশেষ করে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে। লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে লেবু-পানি ওজন কমাতে সহায়ক:

শরীরের ফ্যাট কমাতে সহায়তা: সকালে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে শরীরের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। এতে চিনি বা অন্য কোনো মিষ্টি উপাদান মেশানো উচিত নয়।

হাইড্রেশন: লেবু-পানি শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। গবেষণা বলছে, শরীরে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ওজন কমানোর সম্ভাবনা বাড়ে। তাই লেবু-পানি পান করলে শরীরের ফ্যাট দূর হয়ে যায়।

বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা: লেবু-পানি বিপাকক্রিয়া বাড়াতে সহায়ক। বেশি পরিমাণ পানি পান করলে বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়ে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

ক্ষুধা কমাতে সহায়তা: খাবার খাওয়ার আগে লেবু-পানি পান করলে ক্ষুধা কমে এবং কম খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। গবেষণা বলছে, খাবারের আগে পানি পান করলে শরীরে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কম ক্যালোরি প্রবেশ করতে পারে।

সকালে লেবু-পানি পান করা ওজন কমানোর একটি কার্যকরী উপায়। তবে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামও জরুরি। লেবু-পানি পান করার মাধ্যমে শরীরের হাইড্রেশন এবং বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু খাওয়ার উপকারিতা, ভরা পেটে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা, গরম পানিতে লেবু ও মধুর অপকারিতা, খালি পেটে ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, খালি পেটে লেবু খাওয়ার অপকারিতা, সকালে খালি পেটে লেবু গরম পানি খাওয়ার অপকারিতা

Related Articles

Back to top button
error: