
Last updated on August 31st, 2025 at 09:38 am
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত, সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও সময়, সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও সূরা, সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়, সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত, সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত আরবিতে, সালাতুল হাজত নামাজের নিষিদ্ধ সময়, সালাতুল হাজত নামাজের উপকারিতা
সালাতুল হাজত নামাজে বিশেষ প্রয়োজন পূরণ ও দুশ্চিন্তা দূর হয়। প্রয়োজনে বা বিশেষ উদ্দেশ্যে বা বিপদমুক্তির জন্য এই নামাজ আদায় করা হয়।
সালাতুল হাজত কী?
কোন হালাল চাহিদা পুরনের জন্য আল্লাহ’র সন্তষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করাকে “সালাতুল হাজত” বলা হয়।
( ইবনু মাজাহঃ হা/১৩৮৫)
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ বা প্রয়োজন পূরণের নামাজ যা বিশেষ প্রয়োজনের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে আদায় করা হয়। এটি মুমিনদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং দুশ্চিন্তা বা কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির মাধ্যম। হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত এবং এর নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসা শক্তিশালী করে।
সালাতুল হাজতের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো প্রয়োজন পূরণে এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এ নামাজ পড়ার গুরুত্ব রয়েছে-
হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় (বিপদ-আপদ) চলে আসতো; তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (আবু দাউদ)
হাদিসে এসেছে যে, যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করেন (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)। এটি মুমিনের জন্য একটি শক্তিশালী আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার মাধ্যম যা মানসিক শান্তি এবং ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।
সালাতুল হাজত কখন পড়বেন
কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বা শারীরিক-মানসিকভাবে কোনো দুশ্চিন্তা দেখা দিলে এ নামাজ পড়তে হয়।
নিষিদ্ধ সময় (সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত, দ্বিপ্রহর) ও মাকরুহ সময় ছাড়া অন্য যেকোন সময়ে পড়তে পারেন।
- নির্দিষ্ট সময় নেই, তবে নিষিদ্ধ সময় (সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, এবং মধ্যাহ্নে) এড়ানো উচিত।
- সর্বোত্তম সময়:
- রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)
- ফজর বা মাগরিব নামাজের পর
- জুমার দিন, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত
সালাতুল হাজতের ২ রাকাত নফল নামায পড়ছেন এটা মনে মনে নিয়ত করবেন
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজত নামাজের আলাদা কোনো নিয়ম নেই।
স্বাভাবিক নামাজের মতোই উত্তমভাবে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বেন।
নামাজ শেষে সালাম ফিরানোর আগে আল্লাহ তায়ালার হামদ ও ছানা (প্রসংসা) এবং নবী করিম (সা.)-এর ওপর মুহাব্বত নিয়ে দরুদ শরিফ পাঠ করে প্রয়োজনের বিষয়টির কথা নিয়তের মধ্যে এনে নিচের দুআর যেকোন ১টি পড়বেন:
সালাতুল হাজতের দোয়াঃ
(ُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)
(রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হা’সানাতাও ওয়া ফিল আখিরতি হা’সানাতাও ওয়া ক্বিনা আ’জাবান্নার)
অথবা –
ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ
ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ
ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻣَﺔَ
ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻟَﺎ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻟَّﺎ
ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ
ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাহুল হা’লিমুল কারিম। সুবহানাল্লাহি রব্বিল আ’রশিল আ’জিম। আলহা’মদুলিল্লাহি রব্বিল আ’লামিন। আছআলুকা মুজিবাতি রহ’মাতিকা ওয়া আ’যা-ইমা মাগফিরতিকা ওয়াল গনিমাতা মিং কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামাতা মিং কুল্লি ইছমি। লা তাদাঅা’লি- জাম্বান ইল্লা গফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফার্- রজতাহু ওয়ালা হা’জাতান হি-ইয়া লাকা রিদান- ইল্লা ক্ব-দাইতাহা ইয়া আর হামার রহিমীন।
(তিরমিজি, মিশকাতঃ হা/৮৭৩, আবু দাউদঃ ১৩১৯; সালাত অধ্যায়-২)
যখন সালাতুল হাজতের দোয়া পড়বেন তখন আপনার প্রয়োজনের কথা মনে মনে স্মরণ করবেন।
দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিস শরিফে বর্ণিত এসব দোয়া অন্যান্য দোয়ার সঙ্গে সাধারণ নামাজের শেষেও বিশেষভাবে পড়া যেতে পারে। এই দোয়াটি পড়তেই হবে— বিষয়টি এমন নয়। আপনি আপনার মতো করে দোয়া করলেও কোনো অসুবিধা নেই।
সালাতুল হাজত নামাজের বিস্তারিত নিয়ম
১. অজু করা
সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজগুলো হল:
- মুখমণ্ডল ধোয়া
- দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া
- মাথায় মসেহ করা
- দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া
২. নিয়ত করা
নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ:
“আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।”
নিয়ত মুখে বলা জরুরি নয়, মনে মনে যথেষ্ট।
৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়
- প্রথম রাকাত:
তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করুন। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়ুন (যেমন সুরা ইখলাস)। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত শেষ করুন। - দ্বিতীয় রাকাত:
একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়ুন, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করুন।
৪. নামাজের পর দোয়া
নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ুন, তারপর নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করুন। হাদিসে, নবী (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন থাকে, সে যেন দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:”
উচ্চারণ:
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম…”
এই দোয়াটি আল্লাহর সাহায্য ও দয়ালুতা প্রার্থনা করে।
৫. অতিরিক্ত দোয়া
উপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। দোয়া করার সময় পূর্ণ ভরসা রাখুন এবং ধৈর্যের সাথে ফলাফলের অপেক্ষা করুন।
সালাতুল হাজত নামাজ এ সতর্কতা:
- নিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং মধ্যাহ্নের সময় নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।
- খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।
- হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধুমাত্র জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।
- ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্যধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন।
সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য একটি অসাধারণ আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যম। এটি জীবনযাত্রায় সঙ্কট কাটানোর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ। এই নামাজটি আপনার প্রয়োজনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার এক শক্তিশালী পথ।
আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিম উম্মাহকে কঠিন বিপদে সালাতুল হাজাত ও দরূদ পড়ে এ দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম, ফজিলত, দোয়া ও আমল




