স্বাস্থ্য ও রূপ চর্চা

মৃগী রোগ কি, কেন হয়, করণীয়, লক্ষণ, ব্যায়াম, মুক্তির উপায়

মৃগী রোগ কি ভাল হয়?, মৃগী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ, মৃগী রোগ কেন হয়, মৃগী রোগ থেকে মুক্তির উপায়, মৃগী রোগের ঔষধের নাম, মৃগী রোগ কি জন্মগত, মৃগী রোগ কি বংশগত, মৃগী রোগের ব্যায়াম।

এই মৃগী রোগ কি, কেন হয়, প্রকার, লক্ষণ এবং মুক্তির উপায়

ফ্ল্যাট কেনার আগে যে বিষয় গুলো খেয়াল রাখবেন ২০২৪

মৃগী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ

সুস্থ একজন মানুষ যদি হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপুনি বা খিঁচুনির শিকার হয়, চোখ-মুখ উল্টিয়ে হাত-পা ছুড়ে কাতরায় বা অজ্ঞান হয়, মুখ দিয়ে ফেনা বা লালা বের হয় বা কোনো শিশুর চোখের পাতা স্থির হয়ে যায়, এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে বা মানসিকভাবে সুস্থ কোনো ব্যক্তি হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে, তবে তাকে মৃগীরোগী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

আমাদের গ্রামাঞ্চলে মৃগী হলে অনেক সময় একে জিনে ধরা, ভূতের আসর হিসেবে ধারণা করা হয়, ঝাড়ফুঁক করা হয়, যা ঠিক না। মৃগী রোগ আসলে হল স্নায়ুতন্ত্রের একটি জটিলতা।

মৃগী রোগ কেন হয় বা খিঁচুনি কেন হয়

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খিঁচুনি বা মৃগীরোগের পেছনে তেমন কোনো কারণ নেই। এ ধরনের খিঁচুনিকে বলে প্রাইমারি এপিলেপসি। শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সংক্রমণ হলে বা জন্মের সময় মাথায় কোনো আঘাত পেলে, অক্সিজেন পেতে দেরি হলে বা শিশুর ওজন কম হলে বা সময়ের আগে জন্ম নিলে, তাদের কখনো মৃগীরোগ হতে দেখা যায়।

বড়দের রক্তে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলে, শর্করা কমে গেলে, মাথায় কোনো আঘাত পেলে বা টিউমার হলে, মস্তিষ্কে সংক্রমণ বা রক্তক্ষরণ হলে খিঁচুনি হতে পারে। মৃগীরোগীদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ওষুধ সেবনেও খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। তবে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো কারণই জানা যায় না।

মৃগী রোগ হলে করণীয় কী

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে। তার পরিধানের কাপড়চোপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে। কাছাকাছি আগুন, গরম পানি, ধারালো কিছু থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। আরামদায়ক অবস্থায় তাকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে তার মুখের লালা বাইরে পড়ে যায়। এই সময় মুখে চামচ, পানি বা অন্য কোনো কিছুই দেওয়া যাবে না। এতে দাঁত বা জিহ্বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার শ্বাসকষ্টও শুরু হতে পারে। অনেক সময় আমরা রোগীকে চেপে ধরি যেন খিঁচুনি না হয়, নাকে জুতা ধরা হয়—এগুলো করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

মৃগী বা এপিলেপসি রোগীর জন্য আনন্দময়, নির্ঝঞ্ঝাট ও গভীর নিদ্রা অতি গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ওষুধ সেবন ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সময়মতো ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম শরীর ভালো থাকার জন্য দরকার ।

কিন্তু মৃগী চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের জন্য অনেক সময় ঘুম কমে যায়। আর ঘুম না হলে মৃগী রোগীদের অসুবিধা বাড়ে।তাই সুস্থ থাকার জন্য মৃগী রোগীকে পর্যাপ্ত ঘুম দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে ঘুমের ওষুধ সেবন করতে হবে।

কিছু বিষয় মেনে চললে এমনিতেই ভালো ঘুম সম্ভব। যেমন-

  • সকালের নাশতার পর ছাড়া সারা দিনে চা-কফি না খাওয়া
  • বিড়ি-সিগারেটসহ অন্য কোনো ধূমপান বা মাদক গ্রহণ না করা
  • মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয় এমন আচরণ এড়িয়ে চলা
  • সর্বদা হাসিখুশি ও প্রফুল্ল থাকা অথবা পছন্দের কোনো কাজ করে সময় কাটানো
  • রাতে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া ও সকালে সঠিক সময়ে বিছানা ছাড়া।

এপিলেপসিতে নৈশকালীন পর্যাপ্ত ঘুম রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব কার্যকর। এপিলেপসি বা মৃগী রোগীদের রাত জেগে পড়াশোনা, গল্পগুজব, কাজ করা উচিত নয়। রাতের ঘুম কম হলে তার বহু ধরনের অসুবিধা দেখা দিতে পারে।

মৃগী রোগীকে গভীর ঘুমের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে ডাকা ঠিক নয়।তাকে সময় নিয়ে ডাকতে হবে। হঠাৎ করে উঠেই যদি সে দ্রুত হাঁটতে বা দৌড়াতে থাকে, তবে খিঁচুনি শুরু হতে পারে। তাই ঘুম ভাঙার পর কিছু সময় বিছানায় থেকে ধীরে ধীরে উঠতে হবে। এ বিষয়টি মৃগী রোগীর পরিবারের সবার জানা থাকা উচিত। স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য মৃগী রোগীর চাই অন্ধকারাচ্ছন্ন, অক্সিজেনসমৃদ্ধ ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশ।অশান্তি, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও ভয়ের ভাবনাগুলো ছুড়ে ফেলে পরিচ্ছন্ন, নরম ও আরামদায়ক বিছানায় আনন্দময় ঘুমের মধ্যে বিচরণ করতে পারলে এপিলেপসির যাবতীয় সমস্যা উপশম হয়ে সে স্বাভাবিক ও ছন্দময় জীবন যাপন করতে পারে।

মৃগী রোগ নির্ণয়

রোগীর ইতিহাস এবং সম্ভব হলে খিঁচুনির ভিডিও এই রোগনির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্কের ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাম উপসর্গভিত্তিক রোগনির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে। মৃগী রোগ নির্ণয় করতে মস্তিষ্কের ইমেজিং-সিটি স্ক্যান বা এমআরআই এবং বিশেষ ক্ষেত্রে আরও কিছু পরীক্ষা লাগতে পারে উদাহারন স্বরূপ রক্তের ইলেকট্রোলাইট, শর্করা, মেরুদণ্ডের রস ইত্যাদি।

মৃগী রোগ এর চিকিৎসা

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে খিঁচুনির কারণ নির্মূল হলে এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, এমনকি সারা জীবনও প্রয়োজন হতে পারে। তাই একজন স্নায়ুরোগ (নিউরোলজি) বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে মৃগীরোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির চিকিৎসা করানো উচিত। কারণ, শিশুদের চিকিৎসা যথাসময়ে না হলে তাদের মেধা ও বুদ্ধিমত্তা হ্রাস পায়।

Related Articles

Back to top button
error: