বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে নেওয়া দরকার তা নিয়ে অনেকেই কিছুটা চিন্তিত থাকেন। BCS পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কিত সিলেবাস, প্রশ্নের ধরন, মানবন্টন, রুটিন, বই তালিকা, কৌশল ও পরীক্ষা পদ্ধতি বিস্তারিত জানা যাবে এই পোস্টে।
বিসিএস কি?
বিসিএস (BCS) এর পূর্ণরূপ হল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (Bangladesh Civil Service)। এটি বাংলাদেশের একটি ১ম শ্রেণির সরকারি চাকরির পরীক্ষা। যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়,তাদেরকে বিসিএস ক্যাডার বলা হয়।
জেনারেল বা সাধারণ ক্যাডার এবং প্রফেশনাল বা টেকনিক্যাল ক্যাডার- এই ২ ধরনের বিসিএস ক্যাডার আছে।
জেনারেল ক্যাডার কী?
একক কথায় জেনারেল ক্যাডার হলো, প্রশাসনিক কাজ পালন করার জন্য প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি। যেমন: পররাষ্ট্র, অ্যাডমিন, পুলিশ- এই পদগুলো জেনারেল ক্যাডার এর অন্তর্ভুক্ত। যে কেউ চাইলে এই ক্যাডারের চাকরি করতে পারবেন।
প্রফেশনাল বা টেকনিক্যাল ক্যাডার কি?
আর টেকনিক্যাল ক্যাডার হলো চাকরির যে পদগুলোতে বিশেষ পড়াশোনা লাগে সেই পদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক পাশ করতে হয়। যেমন: শিক্ষা, প্রকৌশল, ডাক্তার ইত্যাদি।
বর্তমানে জেনারেল ও টেকনিক্যাল বা পেশাগত ক্যাডার মিলিয়ে মোট ২৭টি ক্যাডারে পদ সংখ্যা ১,৮১৪টি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পররাষ্ট্র, পুলিশ, শুল্ক ও আবগারী, কর, প্রশাসন, সাধারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি।
বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা কি?
বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করতে চাইলে প্রার্থীর এসএসসি থেকে স্নাতক (৪ বছর মেয়াদী কোর্স) পর্যন্ত পাশ থাকতে হবে। এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত পরীক্ষার যেকোন দুটিতে দ্বিতীয় শ্রেণী বা সমমান এবং ১টি তৃতীয় শ্রেণী বা সমমান এর নিচে পেলে সেই প্রার্থী বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি:
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস পরীক্ষার প্রক্রিয়া পদ্ধতি প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক- এই ৩টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর আগে যেকোনো স্বীকৃত কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে অনার্স অথবা মাস্টার্স ডিগ্রি বা তার সমমান ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে দুটির কোন একটিতেও তৃতীয় শ্রেণী গ্রহণযোগ্য নয়।
১. প্রিলিমিনারি পরীক্ষা:
প্রিলিমিনারি হল বিসিএস পরীক্ষার প্রাথমিক যোগ্যতা বাছাই পর্ব। প্রিলিমিনারির জন্য মোট সময় থাকে ২ ঘণ্টা। প্রতিটি MCQ প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য আপনি ০১ পাবেন এবং ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর করে কাটা হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয় ও মানবন্টন:
বিষয় | নম্বর |
---|---|
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য | ৩৫ |
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য | ৩৫ |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী | ৩৫ |
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী | ২০ |
পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা | ১০ |
সাধারণ বিজ্ঞান | ১৫ |
কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি | ১৫ |
গাণিতিক যুক্তি | ১৫ |
ধারনামূলক বিশ্লেষণ | ১৫ |
নীতি ও সুশাসন | ১০ |
মোট | ২০০ |
২. লিখিত পরীক্ষা:
বিসিএস পরীক্ষার প্রধান বা মৌলিক অংশ হল এটি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরাই কেবল লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকেন। লিখিত পরীক্ষায় মোট ৯ টি বিষয়ে ৯০০ নম্বরে থাকে। পাশ নম্বর থাকে ৫০%।
“বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা ২০১৪” অনুযায়ী প্রত্যেক ক্যাডারের জন্য ৯টি বাধ্যতামূলক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।
জেনারেল ক্যাডারদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার নম্বর বণ্টন
বিষয় | নম্বর |
---|---|
বাংলা প্রথম | ১০০ |
বাংলা দ্বিতীয় | ১০০ |
জেনারেল ইংলিশ প্রথম পার্ট | ১০০ |
জেনারেল ইংলিশ দ্বিতীয় পার্ট | ১০০ |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী প্রথম পত্র | ১০০ |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী দ্বিতীয় পত্র | ১০০ |
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী | ১০০ |
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১০০ |
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা | ১০০ |
সর্বমোট | ৯০০ |
প্রফেশনাল ক্যাডারদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার নম্বর বণ্টন
বিষয় | নম্বর |
---|---|
সাধারণ বাংলা | ১০০ |
জেনারেল ইংলিশ প্রথম পার্ট | ১০০ |
জেনারেল ইংলিশ দ্বিতীয় পার্ট | ১০০ |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী প্রথম পত্র | ১০০ |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী দ্বিতীয় পত্র | ১০০ |
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী | ১০০ |
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১০০ |
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা | ১০০ |
পদ সম্পর্কিত বিষয় | ২০০ |
সর্বমোট | ৯০০ |
৩. মৌখিক পরীক্ষা:
এটাই বিসিএস এর চুড়ান্ত পরীক্ষা। যারা প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, তারাই মৌখিক পরীক্ষা বা চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। ভাইভা বোর্ড গঠিত হয় একজন চেয়ারম্যান এবং একজন বোর্ড সদস্য দ্বারা। ভাইভায় সাধারণত একাডমিক পড়াশুনা, দেশ, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
বিসিএস পরীক্ষার বিস্তারিত সিলেবাস:
প্রিলিমিনারি:
এই পরীক্ষায় সার্কুলারে মোট ১০টি বিষয়ে ২০০ নম্বর থাকে।
বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ভাষা ও সাহিত্য থেকে মোট ৩৫ নম্বরের ভেতর ভাষার উপর থাকে ১৫ নম্বর। এবং বাকি ২০ নম্বর থাকে সাহিত্যের বিভিন্ন যুগ নিয়ে।
সাধারণ বিজ্ঞানের প্রতিটি (ভৌত বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞান) অংশে রয়েছে ৫ নম্বর।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির ১৫ নম্বরের ১০ নম্বর থাকে কম্পিউটার বিষয়ক এবং বাকি ৫ নম্বর থাকে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে।
গাণিতিক যুক্তি থেকে মোট ১৫ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়। যারমধ্যে পাটিগণিত, জ্যামিতি ও বিচ্ছিন্নগণিতে ৩ করে এবং বীজগণিতে ৬ নম্বর থাকে।
বাকি ৫ বিষয়ের মানবন্টন সার্কুলার অনুযায়ী হয়।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সিলেবাস:
লিখিত:
লিখিত পরীক্ষায় সাধারণ ও প্রফেশনাল ক্যাডারের জন্য ভিন্ন সিলেবাস থাকে। প্রতিটি ২০০ নম্বরের পরীক্ষার সময় থাকে ৪ ঘন্টা। ৩ ঘন্টা থাকে প্রতি ১০০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য। লিখিত পরীক্ষায় গড় পাশ মার্ক থাকে ৫০%।
ভাইভা:
ভাইভার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। ভাইভা বোর্ডে সাধারণত নিজের সম্পর্কে, নিজের জেলা সম্পর্কে, অনার্সে পঠিত বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হইয়ে থাকে। তাছাড়া সমসাময়িক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও প্রশ্ন করা হতে পারে। এবং প্রার্থীর ক্যাডার পছন্দক্রম থেকে ক্যাডার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভার মোট ৯০০+২০০= ১১০০ নম্বরের মধ্যে একজন প্রার্থী যত পাবেন, তার উপর ভিত্তি করে তাকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করবে।
বিসিএস এর জন্য কোন বইগুলো পরবেন ?
বিসিএস প্রস্তুতির রুটিন দেখতে নিচের এই আর্টিকেলে ক্লিক করুন।
বিসিএস প্রস্তুতি রুটিন?
বিসিএস প্রস্তুতির রুটিন দেখতে নিচের এই আর্টিকেলে ক্লিক করুন।
বিসিএস প্রস্তুতি কৌশল
সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগান
অপ্রয়োজনীয় বিষয় পড়ে সময় নষ্ট করবেন না। এর চাইতে একটা প্রয়োজনীয় বিষয় দুইবার রিভিশন দিতে পারেন বা পড়া হয়নি এ রকম একটা প্রয়োজনীয় বিষয় পড়ে ফেলুন। সিলেবাসের যে বিষয়ে আপনার দক্ষতা বেশি, তাতে একটু কম জোর দিয়ে অন্যগুলোতে একটু বেশি সময় দেবেন।
সারা বছরের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স না পড়ে সালতামামি একবার দেখে নিন। আর নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করুন।
নিয়মিত পড়াশোনা করুন
বিসিএসে টিকতে নিয়মিত পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। বিগত বছরের বিসিএস প্রশ্ন এনালাইসিস করে দেখুন। বাজারের সব বই না কিনে একেবারে প্রথম সারির একটা ডাইজেস্ট দিয়ে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা যায়। কারণ দেখা যায় বেশিরভাগ বইয়েই একইরকম তথ্য দেওয়া।
নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতার জায়গা বের করুন
বিসিএস সিলেবাসটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। সিলেবাস ধরে বিগত প্রশ্নগুলো পড়ে দুর্বল জায়গা খুঁজে বের করুন। বিসিএস সিলেবাসে এমন অনেক টপিক আছে যা একেবারেই নতুন। এই নতুন বিষয়গুলো থেকে গুরত্বপুর্ন বিষয় সিলেক্ট করুন আর পড়া শুরু করে দিন।
পড়ার একটি রুটিন তৈরি করুন
বিসিএস প্রস্তুতিতে এমন ভাবে রুটিন করুন যা আপনি সহজেই অনুসরণ করতে পারবেন। একটি স্মার্ট রুটিন আপনাকে অগোছালো পড়ার চাপ থেকে মুক্ত করবে। পরীক্ষার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত পড়াশোনার বাইরে অপ্রয়োজনীয় সকল কাজ বাদ দিন। রুটিন অনুযায়ী নিয়ম করে পরুন।
নোট করে রাখুন
বিসিএস ক্যাডার হতে হলে অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে। আপনার অধ্যয়ন থেকে নোট করে রাখুন। পড়ার সময় যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে লাল বা নীল কালি দিয়ে আন্ডারলাইন করুন।
গ্রুপ স্টাডি করতে পারেন
গ্রুপ স্টাডি বিসিএস প্রস্তুতির অন্যতম একটি উপায়। একজন প্রার্থী গ্রুপ-সদস্যদের কাছ থেকে অনেক প্রয়োজনীয় আপডেট পেতে পারেন। আপনি বন্ধুদের সাথে বা অনলাইনে ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিতে পারেন।
বিসিএস মডেল টেস্ট দিন
ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও অনেকে পরীক্ষার সময় সব প্রশ্নের উত্তর করে আসা যায় না এই সমস্যা উত্তরণের জন্য পরীক্ষার আগেই বেশি বেশি মডেল টেস্ট দিতে হবে। এতে করে পরীক্ষা বিষয়ক সব জড়তা কেটে যাবে ও খুঁটিনাটি ভুলের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে আসবে।
ট্যাগঃ বিসিএস প্রস্তুতি বই, বিসিএস প্রস্তুতি ওয়েবসাইট, বিসিএস প্রস্তুতি রুটিন, অনার্স থেকে বিসিএস প্রস্তুতি, বিসিএস প্রস্তুতি রুটিন পিডিএফ, কোচিং ছাড়া বিসিএস প্রস্তুতি, বিসিএস প্রস্তুতি প্রশ্ন, ২ মাসে বিসিএস প্রস্তুতি, বিসিএস বুক লিস্ট সুশান্ত পাল, বিসিএসের জন্য প্রয়োজনীয় বই সুশান্ত পাল, বিসিএস প্রিলিমিনারি বই pdf, বিসিএস প্রিলিমিনারি বই তালিকা, বিসিএস এর জন্য কোন ডাইজেস্ট ভালো, বিসিএস এর জন্য কত ঘন্টা পড়তে হবে, বিসিএস ক্যাডার সমূহ, বিসিএস প্রস্তুতির জন্য পড়ার রুটিন