যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের পপুলেশন, রিফিউজিস, এবং মাইগ্রেশন (পিআরএম) ব্যুরো অতিরিক্ত ৫০ মিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশে তাদের আশ্রয় দেয়া স্থানীয় জনগণের জন্য।
এর ফলে এই সংকটে বার্মা ও বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ২০১৭ আগস্ট এর পর থেকে ১৬৩ মিলিয়ন ডলার, এবং ২০১৭ অর্থ-বছরে বার্মায় ও বার্মা থেকে আগত বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জন্য মোট মানবিক সহায়তার পরিমান দাড়িয়েছে ২২৫ মিলিয়ন ডলারের বেশী । ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন জে সালিভ্যান এই তহবিলের কথা ঘোষণা করলেন টরন্টোতে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে, এবং তিনি অন্যান্য জি-৭ সদস্যদের সাথে একত্রিত হয়ে মানবাধিকার লংঘন এবং অপব্যবহার, ও রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার নিন্দা জানান।
গত আগস্ট থেকে প্রায় ৭ লক্ষ জনগন, যাদের বেশীরভাগ নারী ও শিশু, বার্মার রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা থেকে পালিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার মধ্যে রয়েছে এমন জনগোষ্ঠী যারা এই সঙ্কটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের জন্য সুরক্ষা, জরুরী আশ্রয়, নিরাপদ পানি, পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা, স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা। এই সহায়তার ফলে আসন্ন বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে জীবনহানি থেকে রক্ষা , আশ্রয়, ও জরুরী সেবা নিশ্চিত করতে শরণার্থীদের প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে ।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)-র সহায়তায় শরণার্থীদের জীবন বাঁচানো খাদ্য সরবরাহ সহ দ্রুত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা, গুরুতর অপুষ্টি আক্রান্তদের পুষ্টি প্রদান, এবং মানবিক সহযোগিতার জন্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ করার দিকে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। গত আগস্ট থেকে ইউএসএআইডি প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে। এর মধ্যে ২৪.৪ মিলিয়ন ডলার বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে (ডব্লিউএফপি) ও ৭.৫ মিলিয়ন ডলার ইউনিসেফকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ইউএসএআইডি প্রায় এক মিলিয়ন ডলার মূল্যের ৯০০,০০০ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ও ২৪৭,০০০ ডলার মূল্যের ৩ মিলিয়ন প্যাকেট খাবার স্যালাইন প্রদান করেছে।
কারো সাথে কথা বলবার সময় যে বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখবেন
যুক্তরাষ্ট্রের সেণ্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনসন (সিডিসি) রোহিঙ্গাদের রোগ প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ, এবং রোগের প্রাদুর্ভাব ও অন্যান্য প্রধান জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সরাসরি প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
সিডিসি বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ইউনিসেফ, এসিএফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা , এবং অন্যান্য অংশীদারদের সাথে রোহিঙ্গাদের পুষ্টি এবং প্রতিষেধক বিষয়ে ভালভাবে বুঝে ভবিষ্যত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্যোগের ব্যাপারে তথ্য সবারাহ করতে কাজ করছে। এ বছরের প্রারম্ভে, সিডিসি পরীক্ষাগারের প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম প্রদান করে যার ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গা শিবিরে ডিপথেরিয়ার কারণে রোগের প্রাদুর্ভাবের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়।
এই মানবিক সঙ্কটে উদারভাবে সাড়া প্রদান করায় আমরা বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানাই এবং বিপন্ন মানুষের কাছে সহায়তা পৌছে দিতে এর অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। এই সঙ্কট নিরসনে একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে আমরা সকল পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি। যেসব ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা রাখতে পারেন সেগুলো হচ্ছে — বার্মায় সহিংসতা বন্ধ করা, সেখানে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও অবিলম্বে মানবিক সহায়তা ও গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার প্রদান, শরণার্থী যারা তাদের আবাসস্থলে ফিরতে চান তারা যেন নিরাপদে ও সম্মানের সাথে তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করা এবং রাখাইন রাজ্যের সঙ্কটের মূল কারণ খুঁজে বের করে তার সমাধান। এই লক্ষ্যে ২০১৭ সালের রাখাইন রাজ্যের অ্যাডভাইজরি কমিশনের পরামর্শগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে বার্মা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।
এই ৫০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান জরুরী সংকটে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস এর শক্তিশালী দ্বি-দলীয় সহযোগিতার প্রতিফলন, এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এই সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা অন্যান্য দাতাদেরকেও আমাদের সাথে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাই ।
সংগৃহীত ( মুল লিংক)