শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম, শবে কদরের নামাজ নফল না সুন্নত, শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে, শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবি, কদরের নামাজ কখন পড়তে হয়, শবে কদরের নামাজের তাসবিহ, শবে কদরের জিকির, Sobe kodor er namaz niom in bangla
রমজানের সময়সূচি 2024 – রমজানের সাহ্রি ও ইফতারের সময়সূচি
শবে কদরের নামাজের নিয়ম, ফজিলত, দোয়া ও আমল। ‘লাইলতুল কদর’ হলআরবি শব্দ। শবে কদর হল‘লাইলাতুল কদর’। ‘শব’ অর্থ রাত, আর আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থ হল রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত। অর্থাৎ লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রজনী। এই রাত ভাগ্য নির্ধারণ বা লাইলাতুল কদরের রাত বা ‘শবেকদর’ হিসেবে পরিচিত। এই রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে।
৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে যা যা পাওয়া যায়
মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত। এই রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কাটাবেন।
হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত খুব উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশকে আজীবন ইতেকাফ করেছেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরে যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম করবে, তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হবে। ’ -সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ৭৬০; সহিহ বোখারি: হাদিস নং ২০১৪
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা পর্যন্ত। (আল কোরআন, সুরা-৯৭ [২৫] আল কদর (মাক্কি), রুকু: ১/২২, আয়াত: ১-৫, মঞ্জিল: ৭, পারা: ৩০ আম্ম-সি পারা, পৃষ্ঠা ৬০৫/১৯)।
শবে কদরের রাতের ফজিলত
মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে অন্য সকল মাসের চেয়ে রমজান মাস বেশি ফজিলত ও বরকতময় হয়েছে। আর রমজানের রাতগুলোর মধ্যে কোরআন মজিদ নাযিলের রাত হল সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত একটি রাত।
পূণ্যময় এ রাতের সম্মানে পবিত্র কোরআনে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাজিল হয়েছে। হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এই এক রাতের ইবাদতের দ্বারা ৮৩ বছর ৪ মাস পর্যন্ত ইবাদত করার যে ফজিলত বা সওয়াব পাওয়া যায়।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি একে নাযিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জান ক্বদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা: কদর, আয়াত: ১-৩)।
তাবেয়ি মুজাহিদ (র.) বলেন, এর ভাবার্থ হলো, ‘এ রাতের ইবাদত, তেলাওয়াত, দরুদ কিয়াম ও অন্যান্য আমল হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও উত্তম। ’
মুফাসসিররা এমনই ব্যাখ্যা করেছেন। আর এটিই সঠিক ব্যাখ্যা। (ইবনে কাসির: ১৮ খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা)।
কেন রাতটিকে শবে কদরের রাত বলা হয়?
শবে কদর কবে? এর সরাসরি কোনো উত্তর কোরআন-হাদিসে আসেনি। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে কদর তালাশ করতে বলেছেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান কর।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস, ২০১৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস, ১১৬৯)
একারণে একজন মুসলিমের নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল কদর এর রাত হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়। বরং শেষ দশকের সবরাতেই যথাসম্ভব শবে কদরের সন্ধান করা উচিত। বিশেষত শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলো। এটিই নবী (স.)-এর আদর্শ। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—‘রমজানের শেষ ১০ রাত শুরু হলে— নবী (স.) কোমর বেঁধে নামতেন। তিনি নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তার পরিবারের সবাইকে (ইবাদতের জন্য) জাগিয়ে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি: ২০২৪; সহিহ মুসলিম: ১১৭৪)
শবে কদরের আমল
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। সুতরাং লাইলাতুল কদর তালাশ করে সঠিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাত যাপনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
- নফল নামাজ পড়া।
- মসজিদে ঢুকেই ২ রাকাত (দুখুলিল মাসজিদ) নামাজ পড়া।
- দুই দুই রাকাত করে (মাগরিবের পর ৬ রাকাত) আউওয়াবিনের নামাজ পড়া।
- রাতে তারাবির নামাজ পড়া।
- সম্ভব হলে সালাতুল হাজাত পড়া।
- শেষ রাতে সাহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।
- সম্ভব হলে সালাতুত তাসবিহ পড়া।
- সম্ভব হলে সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ বেশি বেশি পড়া।
- কুরআন তেলাওয়াত করা।
- সম্ভব হলে তাওবার নামাজ পড়া।
- সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুয্যাম্মিল, সুরা মুদ্দাসির, সুরা ইয়াসিন, সুরা ত্বহা, সুরা আর-রাহমান, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুলক, সুরা কুরাইশ এবং ৪ কুল পড়া।
- দরূদ শরিফ পড়া।
- তাওবাহ-ইসতেগফার পড়া।
- সাইয়্যেদুল ইসতেগফার পড়া।
- জিকির-আজকার করা।
- কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত দোয়াপড়া।
- পরিবার পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা, কবর জেয়ারত করা।
- বেশি বেশি দান-সদকা করা।
শবে কদরের নামাজের নিয়ত
আরবিঃ ‘নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদ্রি নফ্লে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।’
অর্থঃ আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর।
শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম
লাইলাতুল কদরে বিশেষ কোনও নামাজের পদ্ধতি নেই। শবে কদরের নামাজ দুই রাকআত করে যত সুন্দর করে, যত মনোযোগ সহকারে পড়া যায় ততই ভালো। লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই। তাই আপনারা শবে কদরের জন্য যত ইচ্ছা তত নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। এই নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর একবার সূরা কদর ও তিনবার সূরা ইখ্লাস পড়তে হয়। এই নামাজ গুলো যত সুন্দর করে পড়া যায় তত বেশি সওয়াব লাভ করা যায়।
এই রাতে কোরআন তেলাওয়াত করবেন। বেশি বেশি দোয়া পড়বেন। ইস্তেগফার পড়বেন। তওবা করবেন।
শবে কদরের বিশেষ দুয়া
শবে কদরের জন্যে একটি বিশেষ দোয়ার কোথা উল্লেখ রয়েছে হাদিসে। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত যে, তিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, শবে কদরের রাতে আমার কোন দোয়াটি পড়া উচিত?’ তিনি তাঁকে নিচের এই দোয়াটি পড়ার জন্য নির্দেশ দিলেন-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
লাইলাতুল কদর সুরা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কদর। অমা আদরা কামা লাইলাতুল কাদর। লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর। তানাযযালুল মালায়িকাতু অররূহু ফীহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরি। সালামুন হিয়া হাত্তামাত্ব লাই’ল ফাজ্বর।
বাংলা অর্থ:
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
নিশ্চয় আমি এটা (কুরআন) কদর রাতে নাযিল করলাম। আর আপনি কি জানেন, মহিমান্বিত রাত কি? কদর (মহিমান্বিত) রাত, হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতা ও রূহ (জিবরাঈল) (দুনিয়াতে) অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। সে রাতে সম্পূর্ণ শান্তি, ফজর পর্যন্ত বিরাজিত থাকে।
এই রাতে কোরআন তেলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। পবিত্র এই রাতেই মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। এ জন্য কোরআনের সঙ্গে এই রাতের সম্পর্ক ওতপ্রোত। অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় তেলাওয়াতের ফজিলত আত্মসমালোচনা বা আত্মবিচার এ রাতের বিশেষ আমল।
ট্যাগঃ শবে কদরের দোয়া বাংলা, সূরা কদর, লাইলাতুল কদরের সূরা, শবে কদরের নিয়ত, শবে কদরের নামাজ কত রাকাত, শবে কদরের নামাজের দোয়া, শবে কদরের ফজিলত, কদরের রাতের তাসবিহ, শবে কদরের নামাজ কত রাকাত, সূরা কদর, শবে কদরের নামাজ কোন কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়, শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবি, শবে কদরের দোয়া, লাইলাতুল কদরের সূরা, শবে কদরের দোয়া বাংলা, শবে কদরের আমল, লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস, লাইলাতুল কদর দোয়া, শবে কদরের নামাজের নিয়ম, শবে কদরের ফজিলত আল কাউসার, লাইলাতুল কদর এর ফজিলত, লাইলাতুল কদর কি, সুরা কদর, লাইলাতুল কদর সূরা, শবে কদরের নামাজ কত রাকাত, শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া, শবে বরাতের নামাজের নিয়ম, কদরের নামাজের দোয়া, শবে কদরের ইবাদতের নিয়ম, শবে কদরের দোয়া, শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবি, শবে কদরের নামাজ কোন কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়।