৬ মাসের বাচ্চার প্রথম খাবার, বয়স অনুযায়ী শিশুর খাবারের তালিকা, ৬ মাস শিশুর খাদ্য তালিকা, 2 বছরের শিশুর খাবার তালিকা, ৫ মাসের শিশুর খাবার তালিকা, 5 বছরের বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত, ৪ মাসের শিশুর খাবার তালিকা, ৮ বছরের শিশুর ওজন।
৬ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুর খাবারের ক্ষেত্রে যা অবশ্যই মানবেন
এই ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে, শিশুরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক পৌঁছে যায়। এই সময়ে দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তিও উন্নত হয়। এই সময়ে শুধু মাত্র বুকের দুধ তাদের জন্য যথেষ্ট নয় তাই বুকের দুধের পাশাপাশি যুক্ত করা উচিত বাড়তি খাবার। নিচের বিষয় গুলো তাই এ সময়ে মনে রাখা জরুরী।
সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর যত উপকারিতা
- শিশুর জন্মের ৬ মাস পরেও বুকের দুধ শিশুর শক্তি এবং পুষ্টির প্রধান উৎস, তবে যুক্ত করা উচিত বাড়তি খাবার।
- শিশুর পাকস্থলী খুবই ছোট তাই সারা দিন অল্প পরিমাণে নরম পুষ্টিকর খাবার ঘন ঘন দেয়া প্রয়োজন।
- শস্য, মূল এবং কন্দ (শক্তিদায়ক) ছাড়াও বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরণের খাবার – বিশেষত প্রানিজ খাবার (দুগ্ধ, ডিম, মাংস, মাছ এবং হাঁস-মুরগি), ফলমূল এবং শাকসবজি প্রতিদিন দিন।
- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পরে তাকে বাড়তি খাবার দিন যাতে সে বুকের দুধ খাওয়া যতটা সম্ভব চালিয়ে যেতে পারে।
- শিশুকে বাড়তি খাবার খাওয়ানো শুরু করলে খেয়াল রাখুন যেন সে অসুস্থ না হয়। শিশু এই সময় বেশ নড়াচড়া শুরু করে তাই সহজেই জীবাণু তার হাত থেকে মুখে যেতে পারে। খাবার প্রস্তুত করার আগে এবং প্রতিবার খাওয়ানোর আগে আপনার এবং শিশুর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে শিশুকে অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করুন।
- ৬ মাস বয়সে শিশু কেবল চিবানো শিখছেন। তাই তার প্রথম খাবারগুলি নরম হওয়া দরকার যাতে এগুলি গিলে ফেলতে খুব সহজ হয়।
- আপনি যখন ক্ষুধার লক্ষণগুলি দেখেন তখন বাচ্চাকে খাওয়ান – যেমন বাচ্চা তার মুখে হাত দিলে। হাত ধোয়ার পরে, আপনার শিশুকে দিনে দু’বার মাত্র দুই থেকে তিন চামচ নরম খাবার দিয়ে শুরু করুন। এই বয়সে, তার পেট ছোট তাই প্রতিবার অল্প পরিমাণে খাবার দিন।
- নতুন খাবারের স্বাদ আপনার শিশুকে অবাক করে দিতে পারে। এই নতুন খাবার এবং স্বাদে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য তাকে সময় দিন। ধৈর্য ধরুন এবং আপনার বাচ্চাকে খেতে জোর করবেন না। শিশুর পেট ভরেছে এমন লক্ষণগুলি দেখুন এবং তারপরে তাকে খাওয়ানো বন্ধ করুন।
- আপনার বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে তার খাবারের চাহিদাও বাড়তে থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে প্রতিবার খাবারে সে আরও বেশি খাবার খেতে পারে।
উৎস: ইউনিসেফ
আপনার বাচ্চা খেতে না চাইলে কি করবেন?
শিশুদের খাওয়ার সমস্যা সমাধানের কিছু কার্যকরী পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
সমস্যার কারণ
- বৈচিত্র্য না থাকা: প্রতিদিন একই ধরনের খাবার খেলে শিশুরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
- খাবারের ঘনত্ব ঠিক না থাকা: বেশি তরল বা খুব শক্ত খাবার শিশুর খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে।
- বুকের দুধের পরপর বাড়তি খাবার দেওয়া: দুধ খাওয়ার পর ভারী খাবার দিলে শিশুরা খেতে চাইবে না।
- ঘন ঘন খাবার দেওয়া: শিশুদের পেট ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা তাদের খাবারের প্রতি ভীতি সৃষ্টি করতে পারে।
- বাইরের খাবারের প্রতি আগ্রহ: চকলেট, চিপস ইত্যাদি বাইরের খাবার ঘরে তৈরি খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি করতে পারে।
সমাধানের পরামর্শ
- পর্যবেক্ষণ করুন: শিশু ঘরে তৈরি কোন খাবার খেতে আগ্রহী সেটা লক্ষ্য করুন। প্রতিদিন না দিয়ে মাঝে মাঝে দিন যাতে শিশুর আগ্রহ বজায় থাকে।
- স্বাদ পরিবর্তন করুন: খাবারের স্বাদ পরিবর্তন করে দেখুন। যেমন, ডিম বা মাছ মাংস ব্লেন্ড করে অন্য খাবারের মধ্যে মিশিয়ে দিতে পারেন।
- ক্ষুধা তৈরি করুন: শিশুর ক্ষুধা তৈরি হওয়ার সময় দিন। কথার মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞাসা করুন সে কি খেতে চায়।
- আনন্দিত রাখুন: খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুর মন ভালো রাখুন। খেলতে খেলতে খেতে চাইলে বাধা দেবেন না।
- সব শিশু সমান নয়: অন্য শিশুদের সাথে তুলনা না করে আপনার শিশুর বিশেষ চাহিদা অনুযায়ী খাবার প্রদান করুন।
পুষ্টির অভাব হলে
যদি মনে হয় শিশুর পুষ্টির অভাব হচ্ছে বা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তবে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশুর খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাণ এবং ফ্রিকোয়েন্সি রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বয়স অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ এবং কত ঘন ঘন খাওয়াতে হবে তা নিয়েও কিছু সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে:
৬ মাস বয়সী শিশুর খাওয়ানোর পরামর্শ:
- প্রথম খাদ্য পরিমাণ:
- শুরুতে: দিনে একবার বা দুবার, এক বা দুই চা চামচ খাদ্য দিন।
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে: খাবারের পরিমাণ এবং ফ্রিকোয়েন্সি ধীরে ধীরে বাড়ান।
- খাবারের ধরণ:
- দুধ: কঠিন খাবার শুরু করার পরেও দুধ (প্রায় এক লিটার প্রতি দিন) দেবেন। এতে চার থেকে ছয়টি নার্সিং সেশন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
- নরম খাদ্য: খাদ্যশস্য বা ফল/সবজির পিউরি দিয়ে খাদ্যাভ্যাস শুরু করুন।
- প্রোটিন: আধা-কঠিন খাবার গ্রহণ করার পর, ছোটো চা চামচে প্রোটিন (যেমন মাংস বা মাছ) দিন। নিশ্চিত করুন যে এটি সহজে হজমযোগ্য এবং ছোটো ছোটো কুচি করা হয়েছে।
- খাবার নিরাপত্তা:
- বড়ো টুকরো এড়ানো: গাজর বা চিনাবাদামের মতো বড়ো আকারের খাবার এড়িয়ে চলুন, যা শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
- দই এবং চিজ: গরুর দুধের পরিবর্তে, দই ও নরম চিজ ব্যবহার শুরু করতে পারেন, তবে গরুর দুধ অন্তর্ভুক্ত করার দরকার নেই এখনও।
- খাওয়ার রুটিন:
- ৬ থেকে ৮ মাস বয়সে: কঠিন খাবার দিন দিনে তিনবার। এতে ৪ থেকে ৯ টেবিল চামচ ফল, শাকসবজি এবং খাদ্যশস্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
- ঘুমের সঙ্গে খাওয়ানো:
- বাচ্চার ঘুমের পর: দীর্ঘ ঘুমের পরে শিশুরা ক্ষুধার্ত বোধ করতে পারে। ঘুম থেকে ওঠার পর হাতের কাছাকাছি শিশুর ফিডিং বোতল রাখুন।
- ঘুমের সময়: শিশুর ঘুমের সময়ের আগে খাবার দিলে তারা আরও বেশি ঘুমাতে পারে।
- খাওয়ানোর সময়সূচী:
- স্তন্যদুগ্ধ এবং কঠিন খাবার: স্তন্যদুগ্ধের সেশন চালিয়ে যেতে হবে, এবং প্রাতঃরাশ, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারে কঠিন খাবার চালু করুন।
পরিশেষে
শিশুর খাবার দেওয়ার সময় তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ লক্ষ্য করুন—যদি শিশুর ক্ষুধার্ত মনে হয়, তবে তাকে আরও খাবার দিন, এবং যদি সে মাথা ঘুরিয়ে নেয় বা খেতে অস্বীকার করে, তাহলে হয়তো তার পেট পূর্ণ হয়ে গেছে। শিশুর খাবারের পরিমাণ এবং ফ্রিকোয়েন্সি তার বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং ব্যক্তিগত চাহিদার ওপর নির্ভর করে।
যদি আপনার কোনও প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে, তাহলে শিশুর পেডিয়াট্রিশিয়ান বা শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করুন।
৬ মাস শিশুর খাদ্য তালিকা, ৬ মাসের বাচ্চার প্রথম খাবার, বয়স+অনুযায়ী+শিশুর+খাবার+তালিকা, ১২ মাসের শিশুর খাবার তালিকা, ৮ মাসের শিশুর খাবার তালিকা, ৪ বছরের শিশুর খাবার তালিকা, ১-২ বছরের শিশুর খাবার তালিকা, ১ মাসের শিশুর খাবার তালিকা