স্বাস্থ্য ও রূপ চর্চা

গর্ভাবস্থায় টেনশন – গর্ভাবস্থায় যে উপসর্গগুলি দুশ্চিন্তার কারণ নয়

গর্ভাবস্থায় কান্না করলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় টেনশন করলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় মানসিক রোগ, গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়, গর্ভাবস্থায় অস্থিরতা, গর্ভাবস্থায় কাপুনি, গর্ভাবস্থায় ৭ মাসে বমি, গর্ভাবস্থায় টক খেলে কি হয়।

গর্ভাবস্থায় দুশ্চিন্তা

গর্ভাবস্থায় কিছু উপসর্গ যেমন ওজন বেড়ে যাওয়া, বমি হওয়া এবং অবসাদগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে প্রায় অনেকেরই জানা। এই সময়ে শরীরে হরমোন পরিবর্তনের ফলে আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যার জন্যও আতঙ্কিত বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার কোনও কারণ নেই।

অতি সামান্য রক্তক্ষরণ :

অনেক গর্ভবতী নারীর শুরুর দিকে খুব সামান্য পরিমানে রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় জরায়ূতে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহের কারণে এমন ঘটে থাকে অথবা ভ্রুণ যখন জরায়ূর ভেতরের স্তরে স্থাপিত হওয়া শুরু করে তখন সামান্য রক্ত ক্ষরণ হতে দেখা যায়। ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যে এমন ঘটতে পারে। খুব সামান্য পরিমানে গোলাপি বা কালচে রক্তের ছোপ এমন সময় অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয় কিন্তু যদি বেশি পরিমানে তাজা রক্ত নিঃসৃত হয় যা দেখতে মাসিকের মতো মনে হয় তবে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এমন সময় গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।

সাদা স্রাব নিঃসরণ :

লিউকোরিয়ার মতো সাদা স্রাব নিঃসরণ গর্ভাবস্থায় অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়। শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গর্ভাবস্থায় এমন হয়। সন্তান প্রসবের প্রায় ২/১ সপ্তাহ আগে এই স্রাবের নিঃসরণ বেশি হতে পারে কারণ এই তরল জরায়ূর মুখ খুলতে এবং জরায়ূ মুখকে নরম করে সন্তান প্রসবের জন্য শরীরকে তৈরি করতে সাহায্য করে। খেয়াল রাখতে হবে নিঃসৃত তরল যদি পানির মত বর্ণহীন হয় এবং ক্রমাগত প্রচুর পরিমানে নিঃসরণ হতে থাকে তবে তা স্রাব নয় বরং গর্ভের পানি ভেঙে এমন হতে পারে, সেক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

৩. নাক ও দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া :

গর্ভাবস্থায় নাক এবং মুখের রক্তনালীতে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার ফলে এগুলো অধিক সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এজন্য অনেক সময় নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে বা দাঁত ব্রাশ করার সময় রক্তপাত হতে পারে। এমন হলে রাতে শোবার সময় নাকে নরমাল স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে এবং দাঁত ব্রাশ করার সময় নরম ব্রিসলের ব্রাশ দিয়ে সাবধানে ব্রাশ করা যেতে পারে।

৪. চামড়া ঝুলে পড়া :

গর্ভধারণের ৪ থেকে ৬ মাস সময়ের মধ্যে বগল, কুচকি এবং অন্যান্য স্থানে চামড়ার অতিরিক্ত বৃদ্ধর ফলে সন্ধিস্থলগুলোতে কুচকানো চামড়া ঝুলে থাকতে দেখা যায়। এ সময় পেটের আশেপাশে ফাটল ও দেখা যায় । শরীরে হরমোনের পরিবর্তন এবং অল্প সময়ে দ্রুত ওজন বৃদ্ধির কারণেই এমন হয়ে থাকে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করে থাকেন। বেশিরভাগ সন্তান ক্ষেত্রে প্রসবের পরে ধীরে ধীরে এসব উপসর্গ ঠিক হয়ে যায়। তবে পেটের আশেপাশে যে দাগ পড়ে যায় তা অনেকসময় ঠিক নাও হতে পারে।

৫. নিজের হৃদস্পন্দনের শব্দ নিজ কানে অনুভব করা :

গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের প্রবাহ মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হৃদযন্ত্রকে দ্রুততার সাথে অতিরিক্ত রক্ত পাম্প করতে হয় বলে অনেক সময় অনেক গর্ভবতী নিজের হৃদস্পন্দন নিজ কানেই শুনতে পান। এতে চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।

৬. পায়ের এবং যোনির আশেপাশের রক্তনালী ফুলে ওঠা :

গর্ভবতী নারীর জরায়ূতে শিশু ধারণের কারণে এবং রক্তের প্রবাহমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রধান রক্তনালীগুলোতে চাপ পড়ে। ফলে চিকন নালীতে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এতে পেটের নিচের দিকে রক্তপ্রবাহ সম পরিমানে হয় না বলে পায়ের রক্তনালীগুলো ফুলে ওঠে ও পানিপূর্ণ হয়ে যায়। যোনির আশে পাশেও এমন সমস্যা দেখা যেতে পারে। এর ফলে গর্ভবতী নারী অস্বস্তি বোধ করেন। এমন উপসর্গ প্রতিরোধ করতে বাড়তি ওজন কমানো বেশি জরুরী। প্রসবের পরে এই ধরনের সমস্যা নিজে থেকেই দূর হয়ে যায়। যোনির আশেপাশে বরফের স্যাক কিছুটা আরাম দিতে পারে।

৭. স্তনের বোঁটার চারপাশ কাল হয়ে যাওয়া :

গর্ভবতী নারীর স্তনের চারপাশে বাদামি অংশ কাল বর্ণ ধারণ করে এবং তা বিস্তৃতি লাভ করে।সাধারণত প্রাকৃতিকভাবেই সন্তানকে দুগ্ধ পান করানোর জন্যই স্তন বৃন্ত প্রস্তুত হয়।  

৮. অসাড়তা এবং ঝিমঝিম ভাব:

গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাবে কোমরের নিচের হাড় বা শ্রোণীচক্র প্রসারিত হয় এবং অন্যান্য সন্ধি গুলো ও আলগা হতে থাকে যা কোমরের নিচের অংশের ব্যথার কারণ হতে পারে ও পায়ে অসাড়তা এবং ঝিমঝিম ভাব দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী নারীর জন্য উপযোগী ম্যাসেজ এবং ইওগা দ্বারা এই সমস্যা দূর করা যায়।

৯. হাতের কব্জিতে ব্যথা অনুভব :

গর্ভাবস্থায় পেশীকলা ফুলে ওঠার কারণে কব্জিতে ব্যথা অনুভুত হতে পারে আবার হাতের নার্ভে চাপ পরার কারণেও গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এমন উপসর্গ দেখা দেয়। এর ফলে আঙ্গুলে অসাড়তা এবং ঝিমঝিম ভাব থাকতে পারে। প্রসবের পরে এই ব্যথা এমনিতেই কমে যায়।

১০. ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখা :

অনাগত শিশুকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার কারণে ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখেন অনেকে। অবচেতন মনেই অনাগত শিশুকে নিয়ে দুর্ভাবনা মায়ের মনে থাকে যার ফলে তিনি এমন দুঃস্বপ্ন দেখেন। এই সকল স্বপ্ন খারাপ কোন কিছুর পূর্বাভাস নয়।  

গর্ভাবস্থায় কান্না করলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় মানসিক পরিবর্তন, গর্ভাবস্থায় কি কি করনীয়, নয় মাসের গর্ভাবস্থা, গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার উপায়, গর্ভাবস্থায় বাম কাত হয়ে শোয়া, গর্ভাবস্থায় গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ, গর্ভাবস্থায় বার বার পায়খানা।

আরও পড়ুন

গর্ভকালীন সেক্স প্ল্যানিং কেমন হবে?

গর্ভাবস্থায় যে খাবার গুলো অবশ্যই খাবেন না

গর্ভাবস্থায় যে খাবার গুলো অবশ্যই খাবেন

Related Articles

Back to top button
error: