দৈনন্দিন জীবন

মা বাবার অবাধ্য হলে কি হয়!

ইসলামে নির্দেশ রয়েছে মা বাবার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের। মা-বাবার অবাধ্য হলে ক্ষতি হয় ইহকাল ও পরকালে। মা-বাবার অবাধ্য হলে যা হয়-

১. মা বাবার অবাধ্য ব্যক্তির রিজিকে সংকট হয় এবং তার জীবনে কোনো রকম বরকত হয় না। আবু হুরায়রা ও আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রিজিকে প্রশস্ততা কামনা করে ও বয়সে বরকত চায়, সে যেন নিজ আত্মীয়তার সাথে বন্ধন রক্ষা করে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৬৭; মুসলিম, হাদিস : ২৫৫৭)

নিজ মা-বাবার চেয়ে নিকটাত্মীয় আর কেউ নেই আর তাই মা-বাবার আনুগত্য রিজিক ও হায়াতে বরকতের প্রধান কারণ।

২. মা-বাবার অবাধ্য সন্তান কখনো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে না। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রতিপালকের সন্তুষ্টি মা-বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং তাঁর অসন্তুষ্টি তাঁদের অসন্তুষ্টির মধ্যে।’ (সাহিহুল জামি : ৩/১৭৮)

৩. মা বাবার অবাধ্য সন্তানের ঘরে জন্ম নেয়া তার সন্তানও অবাধ্য হয়! আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সৎকর্ম করল, সে তা তার ভালোর জন্যই করল। আর যে মন্দকর্ম করল, সে অবশ্যই তার প্রতিফল ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের ওপর কোনো জুলুম করেন না।’ (হামিম আস সাজদা, আয়াত : ৪৬)

৪. কোনো সন্তান তার মা-বাবার অবাধ্য হওয়ার কারণে মা-বাবা যদি তাকে কোনো বদদোয়া বা অভিশাপ দেয় তাহলে তা তার অকল্যাণ বয়ে আনবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ আল্লাহর কাছে করা তিনটি দোয়া কখনো নামঞ্জুর করা হয় না তা হল – মা-বাবার দোয়া সন্তানের জন্য, রোজাদারের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া।’ (সাহিহুল জামি : ৩/৬৩)

যেভাবে মা-বাবার দোয়ায় সন্তানের কল্যাণে আসে, ঠিক তেমনি তাদের বদদোয়াও সন্তানের অকল্যাণ ডেকে আনে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, জুরাইজ নামক ইবাদতগুজার ব্যক্তি কোনো এক গির্জায় ইবাদত করত। একদিন তার মা গির্জায় এসে তাকে ডাকতে শুরু করল। তিনি বললেন, হে জুরাইজ! আমি তোমার মা। তুমি আমার সাথে কথা বলো। তখন তার মা জুরাইজকে নামাজ পড়তে দেখলেন। তখন সে তাঁর ডাকে বললেন, হে আল্লাহ! আমার মা এবং আমার নামাজ! এ কথা বলেই তিনি নামাজে রত থাকলেন। এভাবে তার মা তাকে তিন দিন ডাকলেন এবং সে প্রতিদিনই তাঁর সঙ্গে একই আচরণ দেখালেন। তৃতীয় দিন তার মা তাকে এই বলে বদদোয়া করল যে, হে আল্লাহ! আপনি আমার ছেলের মৃত্যু দেবেন না যতক্ষণ না সে কোনো বেশ্যা নারীর চেহারা দেখে। আল্লাহ তাআলা সাথেসাথে তার বদদোয়া কবুল করেন।

এক মেষচারক গির্জায় রাত যাপন করত। একবার এক সুন্দরী নারী গ্রাম থেকে বের হয়ে এলে সে তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। অতঃপর ওই নারী একটি ছেলে জন্ম দেয়। ওই নারীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলল, সন্তানটি ইবাদতগুজার ব্যক্তির। এ কথা শুনে লোকজন কুড়াল-শাবল নিয়ে গির্জায় উপস্থিত হয়। তারা গির্জায় এসে তাকে নামাজ পড়তে দেখে তার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি, বরং গির্জাটি ধ্বংস করতে লাগল। এই কাণ্ড দেখে সে গির্জা থেকে নেমে এলো। তখন তারা তাকে বলল, কিছু জানতে চাইলে এই নারীকে জিজ্ঞেস করো। ইবাদতগুজার ব্যক্তি মুচকি হেসে বাচ্চার মাথায় হাত রেখে বলল, তোমার বাবা কে? বাচ্চাটি বলল, মেষচারক। লোকজন তা শুনে তাকে বলল, আমরা তোমার ধ্বংসপ্রাপ্ত গির্জা সোনা-রুপা দিয়ে বানিয়ে দেব। সে বলল, তা করবা দরকার হবে না, বরং তোমরা মাটি দিয়েই বানিয়ে দাও যেভাবে আগে ছিল। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৫০)

এভাবেই ওই ব্যক্তির জীবনে তার মায়ের বদদোয়া বাস্তবায়িত হলো।

৫. মানুষ মা-বাবার অবাধ্য ব্যক্তির বদনাম করে এবং তার দিকে কখনওই সুদৃষ্টিতে তাকায় না।

৬. মা-বাবার অবাধ্য সন্তান অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসে বলেন, ‘হে মুহাম্মদ! যে ব্যক্তি মা-বাবার কোনো একজনকে জীবিত পেয়েও তাদের সেবা করেনি, বরং তার অবাধ্য হয়েছে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করুক। আল্লাহ তাআলা তাকে তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত করুক। আপনি বলুন, হে আল্লাহ! আপনি দোয়াটি কবুল করুন। আমি বললাম, হে আল্লাহ! আপনি দোয়াটি কবুল করুন।’ (সাহিহুল জামি : ১/৭৮)

সূত্র- কালের কণ্ঠ

Related Articles

Back to top button
error: