প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ ও প্রতিকার, অটিজম কি ভাল হয়, অটিস্টিক শিশু চেনার উপায়, অটিজম কেন হয়, অটিজম কত প্রকার, অটিজম প্রতিরোধ, অটিস্টিক শিশুর ছবি, অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি, অটিজম কত প্রকার, অটিজম বৈশিষ্ট্য, অটিজমের প্রভাব, অটিজম উপসর্গ, অটিজম অর্থ কি, অটিজম কি ভাল হয়, অটিজম কি কারনে হয়, অটিজম কাকে বলে।
আপনার শিশুর অটিজমের লক্ষণ আছে কিনা তা কীভাবে বুঝবেন জেনে নিন এই আর্টিকেল থেকে। যেকোন শিশুর অটিজমের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুদের অটিজম হবার সম্ভাবনা প্রায় চার গুণ বেশি। সাধারণত শিশুর বয়স ৩ বছর হবার আগেইএই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
অটিজম কী?
অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার শিশুদের স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা যার ফলে শিশুর সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে অসুবিধা হয়, আশেপাশের পরিবেশ ও ব্যক্তির সাথে মৌলিক ও ইশারা ইংগিতের মাধ্যমে যোগাযোগের সমস্যা দেখা যায় এবং আচরণের পরিবর্তন হয়।
অটিজমের লক্ষণসমূহ
অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ:
১। ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো বোল না বলা, প্রিয় বস্তুর দিকে ইশারা না করা
২। ১৬ মাসের মধ্যে কোন একটি শব্দ বলতে না পারলে
৩। ২৪ মাস বয়সের মধ্যে দুই বা ততোধিক শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারলে
৪। শব্দ শেখার পর আবার ভুলে যাওয়া
৫। বয়স অনুযায়ী সামাজিক আচরণ করতে না পারা
অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ, কেন হয়, কোন পাশে হয়, চিকিৎসা ২০২৪
অটিজমের সাধারণ লক্ষণসমূহ:
১। শিশুর ভাষা শিখতে সমস্যা
২। একবছর বয়সের মধ্যে ‘দা…দা’, ‘বা…বা’, ‘বু…বু’ উচ্চারণ করতে না পারলে।
৩। দুই বছর বয়সের মধ্যে অর্থপূর্ণ দুটি শব্দ দিয়ে কথা বলতে না পারলে।
৪। শিশু চোখে চোখ না রাখলে
৫। নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দিলে
৬। অন্যের সাথে মিশতে সমস্যা হয় এবং আদর নিতে বা দিতে সমস্যা হলে
৭। হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে উঠলে
৮। পছন্দের বা আনন্দের বস্তু/ বিষয় সে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করতে না পারলে
৯। অন্যের বলা কথা বার বার বললে
১০। বার বার একই আচরণ করলে
১১। শব্দ, আলো, স্পর্শ ইত্যাদি বিষয়ে কম বা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখালে
১২। একটি নিজস্ব রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করা, আশেপাশের কোন পরিবর্তন সহ্য করতে না পারলে।
১৩। নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা থাকলে
১৪। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে না পারলে
রেড ফ্ল্যাগ: অটিজমের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ:
১। স্বাভাবিক আচরণ করতে না পারলে
২। চোখে চোখ রেখে না তাকালে
৩। আনন্দের বিষয়ে আনন্দ না পেলে
৪। পছন্দের বিষয় কারো সাথে ভাগ করে না দেওয়া
৫। নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেয়া
৬। পরিবেশ অনুযায়ী মুখ ভঙ্গি পরিবর্তন না করলে
৭। একই কাজ বারবার করলে (হাত নাড়ানো, তালি দেয়া)
অটিজমের সাথে অন্যান্য যেসব সমস্যা থাকতে পারে:
১। খিঁচুনি (মৃগী)
২। অতিচঞ্চলতা (হাইপার এক্টিভিটি)
৩। স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন
৪। হাতের কাজ করতে জটিলতা
৫। হজমের সমস্যা
৬। দাঁতের সমস্যা
অটিজমের কারণ
অটিজমের কারণ কী তা জানতে দেশে-বিদেশে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে খুব বেশি জানা না গেলেও এটা জানা গেছে যে, অটিজম জিনগত ও পরিবেশগত সমস্যা থেকে হয়।
জিনগত অসুবিধা
বাচ্চা যখন ভ্রুণ অবস্থায় থাকে তখন থেকে এই জিনের অসুবিধা নিয়ে আসে। তবে দেড় বছরের আগেলক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। এই অসুবিধা বাচ্চা জন্ম নিয়ে আসে।
আবার অসুবিধাগুলো প্রকাশ পাবে তাও নয়, কারো অসুবিধা বেশি প্রকাশ পায় আবার কারো মধ্যে কম। এর কারণ হচ্ছে পরিবেশগত অসুবিধা।
পরিবেশগত অসুবিধা
কোন পরিবেশে শিশুটি বড় হচ্ছে এবং তার জিনগত অসুবিধাগুলো প্রকাশ পাবে কতটুকু এটা নির্ভর করে পরিবেশের ওপর।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজম গ্রামে কম, শহরে বেশি। গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে অটিজম বেশি ও প্রান্তিক এলাকায় কম। গবেষণায় এসেছে, ঢাকা শহরে অটিজমের সংখ্যা ১০০ জনে ৩ জন, প্রান্তিক এলাকায় ৭০০ জনে ১ জন শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।’
ঢাকা শহরের বাচ্চারা ঘরের মধ্যেই বেশিরভাগ সময় বাবা-মার সাথে ছোট পরিবারে থাকে। গ্রামে পুরো পরিবার নিয়ে থাকে অন্য শিশুরা, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে তারা মেশার সুযোগ পায়। আবার ঢাকা শহরের বাতাসে হেভি মেটাল থাকে, লেড থাকে, আয়রন থাকে। গ্রামের বাতাসে এগুলো কম থাকে তা প্রমাণিত। ঢাকা শহরের বাচ্চারা মোবাইল ও ফাস্টফুডে আসক্ত ও প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার খায়। তবে গ্রামে এসব কম।
অটিস্টিক শিশু চেনার উপায়
৬ মাস বয়স থেকেই একটি শিশু কথা বলা শুরু করে। বাবলিং শব্দ করে যেমন- বাবা, মা, দাদা। ১ বছর বয়সে মা-বাবাকে সনাক্ত করে পরিচিত শব্দ করে। ২ বছরের মধ্যে একটি শিশু ছোট ছোট ২টি শব্দ একসঙ্গে করে বাক্য তৈরি করতে পারে। যেমন- আমি খাব, আমি যাব বলতে পারে।
যদি ১ বছরের মধ্যে শিশু বাবা-মা বলতে না পারে বা ২ বছরের মধ্যে ছোট শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন করতে না পারে ও কোনো কারণে তার মধ্যে যদি আচরণের কোনো অসুবিধা যেমন- কারণ ছাড়াই আগ্রাসী আচরণ, কারণ ছাড়াই কান্নাকাটি করা, অন্য শিশুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা না করা ইত্যাদি আচরণ দেখা দেয় তখন বুঝতে হবে শিশুটি অটিজমের কিছু বৈশিষ্ট্য বহন করছে।
এ ছাড়া, ২ বছরের কোনো শিশু কানে শুনতে পেলেও ডাক দিলে সাড়া না দেয়, চোখে চোখ না রাখে, বাবা-মা-দাদার মতো শব্দ না বলে এবং কোনো শিশু ১৮ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে যে কথা বলা শুরু করেছিল সেগুলো হারিয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে তা অটিজমের বৈশিষ্ট্য।
অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি
অটিজম শনাক্ত করার জন্য বেশি পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না, কিছু ব্যবহারিক পরিক্ষা করেই বোঝা যায় শিশুটি অটিজমের কিছু সমস্যা আছে কি না। তবে ৩ বছরের আগে পুরোপুরি শনাক্ত করা যায় না। ৩ বছরের মধ্যে সবগুলো বৈশিষ্ট্য চলে আসে। ২ বছরের মধ্যে প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য দেখে ৩ বছরের মধ্যে রোগটা শনাক্ত করা হয়।
সাধারণত অটিজম শিশুদের চিকিৎসায় অনেক বেশি ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। যেহেতু শিশু কথা বলে না, তাই তাকে স্পিচ থেরাপি দেওয়া হয়। যেহেতু আচরণের পরিবর্তন হয় তাই তাকে ব্যবহারিক কিছু ব্যায়াম শেখানোর চেষ্টা করা হয়। অটিজমের সাথে শিশু যদি অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়, খিঁচুনি থাকে, ঘুমের সমস্যা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে কখনো কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
অটিজম প্রতিরোধ ও প্রতিকার
অটিজম যেহেতু স্নায়ুবিক বিকাশ ব্যাহত জনিত সমস্যা তাই এটি সচেতনতার মাধ্যমেই প্রতিরোধ করতে হবে।
পরিবারে কারো স্নায়ুবিক বিকাশ জনিত সমস্যা বা অটিজম বা কোন মানসিক ও আচরণগত সমস্যা থাকলে, পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে এই সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই পরিকল্পিত গর্ভধারণ গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় বেশি দুশ্চিন্তা না করা, পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, শিশুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে এছাড়া নিচের কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
১. গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস স্নায়ুবিক বিকাশের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এই সময়ে যথাযথ বিশ্রাম, আহার এবং এন্টিনেটাল কেয়ার নিতে হবে। এ সেবা সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক বিনামূল্যে দেয়া হয়।
২. বেশি বয়সে বাচ্চা না নেয়া।
৩. বাচ্চা নেয়ার আগে রুবেলা ভেকসিন দিতে হবে।
৪. গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ না খাওয়া যাবে না।
৫. গর্ভাবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া ন্যূনতম চারবার চেকআপ করতে হবে।
৬. মায়ের ধূমপান, বা মায়ের সামনে বা শিশুর সামনে ধূমপান, মদ্যপান, ইয়াবা গ্রহন, গাঁজা নেয়া বা এমন কোন অভ্যাস থাকলে বাচ্চা নেয়ার আগে পরে তা ছেড়ে দিতে হবে।
৭. বাচ্চাকে প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ এবং পরবর্তীতে পূর্ণ দুই বৎসর বুকের দুধের পাশাপাশি সুষম খাবার খাওয়াতে হবে।