তারাবির নামাজের নিয়ত, মহিলাদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম, তারাবির নামাজের নিয়ম ও দোয়া সমূহ, তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল, তারাবির নামাজের মোনাজাত, তারাবির নামাজের দোয়া, তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া, তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল, তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল, তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে, তারাবির নামাজের নিয়ত, তারাবির নামাজ কত রাকাত, তারাবির নামাজের ইতিহাস, তারাবির নামাজের সময়সূচী, তারাবির নামাজ কত রাকাত সহীহ হাদিস
রমজানের রাতের নামাজ হল তারাবিহ।আরবিতে তারাবিহ (تَرَاوِيْح) শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বিশ্রাম করা’। তারাবির নামাজের রয়েছে অনেক ফজিলত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতের (তারাবিহ) নামাজ ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে পড়বে, তার জীবনের আগের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র সময়, যা ইবাদতের বসন্তকাল হিসেবে পরিচিত। এ মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন ইবাদত, যেমন রোজা, তারাবি নামাজ, দোয়া ও কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। রমজান মাসে ইবাদতের সওয়াব অনেক গুণ বেড়ে যায়; যেমন রাসুল (সা.) বলেছেন, “রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করলো, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করলো।”
তারাবি নামাজ
রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো তারাবি নামাজ। এটি এশার ফরজ নামাজের পর পড়া হয় এবং সাধারণত দুই রাকাত করে আদায় করা হয়। নামাজের প্রতি চার রাকাত পর বিশ্রাম নেওয়ার সময় আল্লাহর প্রতি দোয়া করা হয়।
তারাবির নামাজের নিয়ত
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
অর্থ: আমি কেবলামুখি হয়ে দু’রাকাত তারাবির সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।তবে নিয়ত আরবিতেই করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বাংলাতেও করা যাবে।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
নিয়ত: তারাবি নামাজের নিয়ত করা হয়, যা আরবিতে এবং বাংলাতেও করা যেতে পারে।
পড়া: দুই রাকাত করে নামাজ পড়া হয়, এবং চার রাকাতের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিভিন্ন দোয়া বা তাসবিহ পড়া হয়
২ রাকাআত করে আলাদা নিয়তে ৪ রাকাআত নামাজ পড়া। ৪ রাকাআত পড়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া। সেসময় তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার পড়া। গোনাহ মাফে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। খানিক বিশ্রামের পর আবার ২/২ রাকাআত করে ৪ রাকাআত নামাজ আদায় করা। আবার কিছু বিশ্রাম করে আবার নামাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।
প্রত্যেক ৪ রাকাআত নামাজ পড়ার পর বিশ্রামের সময় অনেকেই আল্লাহর কাছে দোয়া করে থাকেন। অনেকে মুনাজাতও করে থাকেন। প্রতি ৪ রাকাতে মুনাজাত না করে একেবারে শেষে করলেও কোনো সমস্যা নেই।
তারাবির বিশেষ দোয়া
তারাবরি নামাজে চার রাকাত পরপর এই দোয়াটি পড়ার প্রচলন রয়েছে। তবে এই দোয়া ছাড়াও যেকোনো দোয়া পড়া যাব।
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.
উচ্চারণ: ‘সুবহানাজিল মুলকি ওয়ালমালাকুতি সুবহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়ালহাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুতি; সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানুমু ওয়া লা ইয়ামুতু, সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাববুনা ওয়া রাব্বুন মালাইকাতি ওয়ার রূহ। ’
অর্থ: আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিবরাইলের (আ.) প্রতিপালক।
তারাবিহ শেষে মুনাজাত
তারাবিহ নামাজ শেষ হলে সবাই সমবেতভাবে মুনাজাত করে। আবার অনেকে একাকি মুনাজাত করে।
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’
মোনাজাতের বাংলা অর্থ:
পবিত্রতা ঘোষণা করছি তাঁর, যিনি ইহজগৎ, ফেরেশতা ও জগতের প্রভু, সেই আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করছি যিনি মহিমাময় বিরাট, ভীতিপূর্ণ, শক্তিময়, গৌরবময় এবং বৃহত্তর। আমি সেই প্রতিপালকের গুণগান করছি, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি কখনও নিদ্রা যান না এবং যার কখনও মৃত্যু ঘটে না। পুত-পবিত্র তিনি। তিনি আমাদের পালনকর্তা, ফেরেশতাকূল এবং আত্মাসমূহের পালনকর্তা। আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমরা আপনার কাছে বেহেশত চাচ্ছি এবং দোযখ থেকে মুক্তি চাচ্ছি।
অনেকে মনে করেন যে যে তারাবি নামাজের পর দোয়া ও মোনাজাত মুখস্থ করতে হবে, কিন্তু আসলে এটির জন্য মুখস্থ থাকা বাধ্যতামূলক নয়।
দোয়া পড়ার স্বাধীনতা। তারাবি নামাজের চার রাকাত পর বিরতিতে যে কোনও দোয়া পড়া যায়, যেমন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, বা অন্য যে কোনও দোয়া। মুখস্থ না থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই। যদি কেউ দোয়া পড়তে না পারে, তাও সমস্যা নেই। তারাবি নামাজ সহীহ হবে। নামাজ পড়ার সময় আনন্দের সাথে আল্লাহর স্মরণে থাকাই মুখ্য, তাই অযথা উদ্বেগের কারণ সৃষ্টি না করে নামাজের প্রতি আগ্রহী হওয়া উচিত।
এভাবে মানুষের মধ্যে নামাজের প্রতি আগ্রহ ও আকর্ষণ বাড়ানো সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা সকলকে মুসলিমকে যথাযথভাবে তারাবিহ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।
তারাবি নামাজ সুন্নত ইবাদত। রমজান মাসে মুসলমানদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নামাজটি আদায় করেছেন এবং সাহাবাগণও তা নিয়মিত পালন করেছেন, তাই এটি সুন্নত হিসেবে গণ্য হয়।
তারাবি নামাজ সুন্নত নাকি নফল?
এটি ফরজ নয়, তবে রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে সুন্নত মুখলিদা (নিয়মিত পালনীয়)।
তারাবি নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভ করা যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও পরকালের আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ পড়বে, তার অতীতের পাপ মার্জনা করা হবে।”
রাসুল (সা.)-এর সময় থেকে আজ পর্যন্ত মুসলমানরা এটি নিয়মিত পালন করে আসছে। হাদিসের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, “আমার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর” (আবু দাউদ, ৪৬০৭)। এটি আমাদের জন্য নির্দেশনা দেয় যে, সুন্নত ইবাদতগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।
তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, তবে অধিকাংশ হানাফি মাযহাবের অনুসারীদের মতে, তারাবি নামাজ ২০ রাকাত।
তারাবির নামাজ কত রাকাত?
- সাহাবাগণের মাঝে প্রমাণিত রয়েছে যে, হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর সময়ে মুসলমানরা ২০ রাকাত তারাবি পড়তেন। এই তথ্য ভিত্তিতে এটি সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে।
- ইয়াজিদ ইবনে খুসাইফা (রা.) উল্লেখ করেছেন যে, সাহাবীরা দীর্ঘ আয়াত নিয়ে এই নামাজ আদায় করতেন।
- কিছু ওলামা ৮ রাকাত পড়ার পক্ষে মত দেন, যা মূলত নবী (সা.)-এর সময়ে অনুষ্ঠিত তারাবি নামাজের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত।
- সাধারণত, দুই রাকাত করে ১০ সালামে ২০ রাকাত পড়া হয়। প্রত্যেক ৪ রাকাত পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার প্রচলন রয়েছে।
বাংলাদেশে হানাফি মাযহাবের অনুসারীদের মাঝে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়া একটি প্রচলিত রীতি। এটি সুন্নতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং মুসলমানদের জন্য আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের একটি সুযোগ।
তাহলে, যারা রমজানের রোজা পালন করছেন, তাদের জন্য তারাবি নামাজ সুন্নত এবং এটি আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়মে এবং সচেতনতার সঙ্গে এটি পালন করা উচিত, যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।