দৈনন্দিন জীবন

জেনে নেয়া যাক, পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদের অবস্থান কোথায়?

সামাজিক ক্ষেত্রে

সংসদে অথবা যাত্রীবাহী বাসে নারীদের জন্য রয়েছে সংরক্ষিত আসন। আবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসও পালন করা হয় বিশ্বব্যাপী। আবার অনেক চাকরি বিজ্ঞাপনে দেখা যায় যে “আমরা নারীদের আবদেন করতে উৎসাহিত করছি”। আমার প্রশ্ন- কেন নারীদের আলাদা ভাবে দেখা হবে? তারা তো মনুষ্য শ্রেণীর এক গোত্রেই বসবাস করে। নারীরা চায় সমঅধিকার, বিচ্ছিন্নতা নয়। একটি যাত্রীবাহী বাসে একটা মেয়েকে কি পরিমান যন্ত্রণার মুখুমুখি হতে হয় তা একজন ভুক্তভুগী ভালো বলতে পারবে। অনেক সময়ই বাসের হেল্পাররা মেয়েদের পরিবহনে তুলতে চায় না কারন সেক্ষেত্রে তারা অতিরিক্ত পুরুষ যাত্রী নিতে পারে না। অনেক পুরুষই ইচ্ছাকৃত ভাবে বাসের ভিড়ে মেয়েদের হয়রানি করবার সুযোগ পায়। মেয়েদের আলাদা সিট থাকায় অনেককেই মেয়েদের প্রতিবন্ধিও বলতে শুনেছি। এখন বিচার বিশ্লেষণে যাওয়া যাক। একটা যাত্রীবাহী বাসে অথবা রাস্তাঘাটে যদি নারী ও পুরুষ কাছাকাছি সমান সংখ্যায় থাকত তবে হয়তবা এই ধরনের মন্তব্যর জন্মই হতনা কারন তখন সংরক্ষিত আসনের চিন্তাই করা হত না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যে, এই সকল স্থানে নারীদের সংখ্যা কেন কম? কারন একটাই তা হল কর্ম ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় কম। এখানে আবার প্রশ্ন আসতে পারে- আসলে নারীরা চাইছেন না কর্মক্ষেত্রে আসতে নাকি নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রাধান্য কম দেয়া হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে দুটো ঘটনাই ঘটছে প্রবলভাবে। অনেক প্রতিষ্ঠান দাবি করে তারা নারী পুরুষ সমান চোখে দেখে কিন্তু আসলে তা কতটুকু বাস্তবিক। এমন অনেক নামি দামী প্রতিষ্ঠানই আছে যেখানে নারীদের শতাংশ পুরুষের তুলনায় গণ্য। আবার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নারীদের রিসিপ্সহানিস্ট এবং সেক্রেটারি পদে প্রাধান্য দেয়া হয় যা আমার কাছে বরাবরই একপাক্ষিক মনে হয়। অনেক নারীই প্রাথমিকভাবে স্বপ্ন দেখেন যে তিনি জীবনে এক সময় প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার পরিবারের জন্য কিছু করবেন কিন্তু বিবাহিত সংসারের হাল ধরবার পর কোথায় যে স্বপ্ন হারিয়ে ফেলেন তা তিনি নিজেই বুঝতে পারেন না।

পারিবারিক ক্ষেত্রে

মেয়ের বয়স বাড়ছে। কখন বিয়ে করবে। বিয়ে হয়েছে, এখন তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিতে হবে। সংসার কখন গুছাবে। চারিইকে গুঞ্জন। একটা মেয়ে যখন সকল প্রতিকুলতার সাথে হার মেনে ঘড় সামলানোকে দায়িত্ব হিসেবে নেয় তখনও কিন্তু তার রেহায় নেই। যেই গৃহিণী অর্থ উপার্জন করে না তার দামতো একটু কমই ধরা হয় যেখানে কিনা তার সারাদিনের ঘাম ঝরানো ক্লান্তি উপেক্ষিত। অনেক পুরুষই পছন্দ করেন তার স্ত্রীকে আদর্শ গৃহিণী হিসেবে দেখতে। যে কিনা সবসময় ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের নায়িকা চরিত্রের মত সেজে তার আশে পাশে বিচরণ করতে থাকবে। যার কাজ হবে বাচ্চা সামলানো, শ্বশুর বাড়ির দেখাশোনা আর মজাদার রান্নাবান্না করে সকলের মন জয় করা। আবার অনেক মেয়েরাই তাদেরকে এই অবস্থায় রাখতে পছন্দ করেন কারন তারা জানেন বাহিরের শেয়াল কুকুরের ভয়ংকর যন্ত্রণার তুলনায় এই চার দেয়ালের নিরাপদ আশ্রয়ে সুখ খোঁজাই শ্রেয়। এখন প্রশ্ন একটাই, নারী, যে কিনা এই সমাজের অর্ধাংশ তাকে ব্যাতিরেখে কীভাবে সমাজ এগিয়ে যাবে? অনেকেই হয়ত বলবে তার লালিত আদর্শ সন্তান এই সমাজকে মুক্ত করবে কিন্তু সেই ঘরের কন্যা সন্তানও যদি তার মায়ের পথের পথিকৃৎ হয় তবে সমাজ তো একসময় এক নায়কত্তের শাসনে ডুবে যাবে।

চাকরি ক্ষেত্রে 

যারা কর্পোরেট চাকরী করে বিশেষ করে মেয়েরা যারা এই সেক্টরে কাজ করেন তাদের অনেকেই জানেন যে প্রমোশানের জন্য তাদের কোন বেগে চলতে হয়। মাঝে মাঝে উপর শ্রেণীর কিছু অফার মেয়েদের জন্য থাকে যা মানলে প্রমোশান নিশ্চিত থাকে। আর তানা হলে অন্যান্য বসপ্রেমী সুন্দরীদের সফলতা দেখেই ক্ষান্ত থাকতে হয়। সকল ক্ষেত্রেই নয় বরং এই অবস্থা শুধু কিছু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে নীরবে পরিচালিত হয়। মুখে যতই শোনা যাক পুরুষেরা তাদের বউকে একাজে সেকাজে সাহায্য করে, বাস্তবিক অর্থে একজন চাকরিজীবী মহিলাকেই দিনের শুরুতে ঠিক করতে হয় যে, তিন বেলা কি রান্না হবে?, বাচ্চা কখন খাবে?, বাচ্চা ঠিকমত বাসায় থাকছে কিনা?, গৃহপরিচারিকা ঠিকমত কাজ করেছে কিনা? ইত্যাদি। চাকরি করছে বলে ফিরতে দেরি হলেও যে দু চারটে কথা শুনতে হবে না ঘরে এসে তাও কিন্তু নয়। মাঝে মাঝে চারিত্রিক সার্টিফিকেট দিয়ে ফেলে নিকটজন। আর চাকরি যদি স্থায়ি না হয় তবে সেক্ষেত্রে বিবাহিত নারীকে সন্তান নেবার পরকল্পনায় শেষে যুদ্ধটা ছেড়েই দিতেই হয়। স্থায়ী অর্থাৎ সরকারী বা রেগুলার পলিসির চাকরির ক্ষেত্রেই মেয়েরা পরিবার পরিকল্পনা করতে পারেন নির্ভয়ে কারন সেক্ষেত্রে অন্তত চাকরিটা ছাড়তে হয় না।

ক্যারিয়ার জীবনে

অনেক মেয়েরাই উচ্চাকাঙ্ক্ষী যারা স্বপ্নই দেখে সব বাধা পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাবার। এক্ষেত্রে সার্বিকভাবে দুই ধরনের সিঁড়ি তাদের সামনে থাকে, এক তারা নিজেদের প্রবল শক্তি দিয়ে সকল বাধা জয় করে, দুই তারা অবলম্বনের হাতের খোঁজে চারিদিকে ছুটতে থাকে। মরীচিকা তুল্য এই অবলম্বনের পেছনে তারা সব হারিয়ে আবার নতুনের পেছনে ছুটতে থাকে যেখানে তারা নিজেদের সামর্থের কথা ভুলে গিয়ে অন্যের মাধ্যমে অর্জিত হতে চায়। বেকারত্ব যেখানে জাতীয় সমস্যা সেখানে মেয়েদের ক্যারিয়ার জীবনে বিচিত্রতার অভাব নেই। অনেকে তার স্বপ্ন নিয়ে আঁকতে থাকে এক নতুন জীবন ছবি, অনেকে বিত্তশালী কোন বরের খোঁজে বের হয় তারপর চালিয়ে যায় ভাবীদের মধ্যে সুন্দরী প্রতিযোগিতা, অনেকে সরকারী চাকুরীর জন্য উপর হয়ে বসে বইয়ের পাতা গুলো সংরক্ষনের জন্য মস্তিস্কের ঝালাই শুরু করে, আবার অনেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি দেয় সুদূর দেশে। বাকিরা ধুলোর শহরে ধাক্কা খেয়ে বাসে উঠে পরে আর নেমে পরে এক নির্ভীক যুদ্ধে। যেই যুদ্ধে কেউ জয়ী হয় আবার কেউ মুখ লুকিয়ে ফেলে চার দেয়ালের কোনে।

লেখক

সুরাইয়া ইয়াসমিন

ট্যাগঃ সমাজে পুরুষের ভূমিকা, আজকাল নারীরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ইংরেজি কি হবে, নারীর অধস্তনতা বলতে কি বুঝ, নারীর অধস্তনতার সামাজিক কারণসমূহ উল্লেখ কর।, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ meaning in english, সামাজিক বৈষম্যের কারণ, সামাজিক বৈষম্য pdf, শিক্ষায় অসমতার কারণ

বয়স বাড়লেই কি ওজন বাড়ে?

সুন্দর ত্বক পেতে যা করবেন! উজ্জ্বল ত্বকের ১০টি জাদুকরী প্রাকৃতিক উপাদান

ওজন কমাতে আদার শরবত (এক সপ্তাহেই ওজন কমিয়ে ফেলুন)

ওজন কমাতে কৌশলগত হউন! যা ডায়েটের তুলনায় সহজ!

মুখের ব্রন ও বড় ছিদ্র থেকে বাসায় বসে পরিত্রাণ পান

এক সপ্তাহে ৫ কেজি ওজন কমান

৬ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুর খাবারের ক্ষেত্রে যা অবশ্যই মনে রাখবেন

গর্ভবতী মায়ের যে বিষয় গুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে

সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর যত উপকারিতা

ত্বকের কালো দাগ দূর করতে ঘরোয়া টিপস!

ত্বকে বয়সের ছাপ বা দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার কারন গুলি জেনে নিন!

অনিদ্রা দূর করার জন্য ৬ টি পরামর্শ

স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ১১টি প্রধান কারণ

ঢাকার সেরা ১০টি কলেজ

শিশুদের কি টিকা দিতে হয়, শিশুর টিকা কখন দিতে হয়, রোগের নাম, টিকার নাম..

Related Articles

Back to top button
error: